প্রয়াত নির্মল জানা। নিজস্ব চিত্র
করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল নন্দীগ্রাম-যুদ্ধের অন্যতম বাম সেনাপতি নির্মল জানার। গত কয়েক দিন ধরেই ভুগছিলেন তিনি। শনিবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর করোনা হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রবীণ ওই সিপিএম নেতার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনৈতিক মহল।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন নির্মল। কিন্তু করোনা আবহেও এমন শারীরিক অবস্থাকে তিনি গুরুত্ব দেননি বলেই দলের একাংশ মনে করছেন। ঘটনায় শোকস্তব্ধ নির্মলের দীর্ঘদিনের সঙ্গী পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। তিনি বলেন, “উনি সবার জন্য চিন্তা করেন, অথচ নিজের শরীরে এত বড় রোগ বাসা বাঁধলেও, তা নিয়ে গুরুত্ব দেননি। করোনা আবহেও টানা জ্বরে আক্রান্ত হয়েও নিজের চিকিৎসা নিয়ে যথেষ্ট উদাসীন ছিলেন নির্মলবাবু।’’ নিরঞ্জন আরও বলেন, ‘‘স্ত্রী বিয়োগের পর থেকেই তমলুকের নিমতৌড়িতে সিপিএমের জেলা পার্টি অফিসেই থাকতেন নির্মলবাবু। কিছু দিন আগেই তিনি তমলুক জেলা সদর হাসপাতাল থেকে করোনা টিকার প্রথম ডোজও নিয়েছিলেন। তবে গত ৭ থেকে ৮ দিন ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হলেও কাউকে কিছু জানাননি”।
নিরঞ্জনের দাবি, ‘‘দিন চারেক আগে নির্মলবাবুর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মনে হল, তিনি হাঁফাচ্ছেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, সামান্য জ্বর রয়েছে। ওষুধ খাচ্ছি, তাই শরীর দুর্বল লাগছে। এর পর অনেক চাপাচাপিতে বৃহস্পতিবার তমলুকের এক চিকিৎসকের কাছে তাঁকে পাঠাই। সেখানেই পরীক্ষার পর জানা যায়, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু এর পরেও দুপুরে পার্টি অফিসে ফিরে ভাত খান নির্মলবাবু। এর পর তাঁকে জোর করেই প্রথমে তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বৃহস্পতিবার। সেদিন সন্ধ্যায় তাঁর অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় চিকিৎসা হলেও শুক্রবার তিনি সকালে উঠে টিফিন সারেন, খবরের কাগজও পড়েন। পরীক্ষায় তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বিকেলের পর থেকে অবস্থা ফের খারাপ হতে থাকে। শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।’’ শনিবারই দিঘায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
দলীয় সূত্রে খবর, নির্মল অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলাতেও সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ার বাসিন্দা হলেও তাঁর একমাত্র কন্যা থাকেন কলকাতায়। নির্মলবাবুর স্ত্রী কর্মসূত্রে মেদিনীপুরে থাকতেন। কয়েক বছর আগে স্ত্রী বিয়োগের পর থেকে নির্মলবাবু পাকাপাকি ভাবে ওঠেন নিমতৌড়ির দলীয় দফতরেই। নন্দীগ্রামের ভোট-যুদ্ধে দলীয় প্রার্থী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অন্যতম সেনাপতি ছিলেন নির্মল।