জমি ছাড়তে নারাজ দুই নেতা

দুই নেতার তরজা আগের দিন ভোটের উত্তাপ এনেছিল পুরুলিয়ায়। শনিবার সেই দুই নেতার গরমাগরম বক্তৃতা ভোটের আঁচ পুরুলিয়া থেকে ছড়িয়ে দিল পাশের জেলা বাঁকুড়াতেও। যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন পুরুলিয়ায় সিপিএমকে কখনও ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারী দিয়েছেন, কোথাও আবার সিপিএমের সঙ্গে কেউটে সাপের মতো ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল ও দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০২:৪১
Share:

বলরামপুরের সরাই ময়দানে অভিষেক। সেই সময়ে রানিবাঁধে সূর্যকান্ত। ছবি: প্রদীপ মাহাতো ও উমাকান্ত ধর

দুই নেতার তরজা আগের দিন ভোটের উত্তাপ এনেছিল পুরুলিয়ায়। শনিবার সেই দুই নেতার গরমাগরম বক্তৃতা ভোটের আঁচ পুরুলিয়া থেকে ছড়িয়ে দিল পাশের জেলা বাঁকুড়াতেও।

Advertisement

যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন পুরুলিয়ায় সিপিএমকে কখনও ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারী দিয়েছেন, কোথাও আবার সিপিএমের সঙ্গে কেউটে সাপের মতো ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র নারদ-কাণ্ড নিয়ে শাসকদলকে রীতিমতো চাঁদমারি করে বাঁকুড়ায় একের পর সভায় এক তির ছুঁড়ে গিয়েছেন। কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন, বুথে-বুথে তাঁদের একজোট হয়ে লড়তে হবে।

এ দিন দুপুরে পাড়া বিধানসভার সাঁওতালডিহির বীরসা চক ময়দানে অভিষেক মনে করিয়ে দেন, ২০১১ সালে তৃণমূলনেত্রী বলেছিলেন, বদলা নয় বদল চাই। এরপরেই যুবরাজের সতর্কতা, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেসকে বলে যাচ্ছি, ১৯ মে ভোটের বাক্স খুলবে। তারপর বাংলার মানুষ নতুন তৃণমূলকে দেখবে। কেন জানো? তোমাদের সৌজন্য অনেক হয়েছে, অনেক সুযোগ দিয়েছি। ভদ্রতা অনেক হয়েছে। আগামী দিনে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে তোমাদের জবাব দেওয়া হবে। তোমরা তৈরি থাক। যে পথ তোমরা দেখিয়েছ, সেই পথেই মানুষ তোমাদের নিয়ে যাবে। আমাদের সৌজন্য দুর্বলতা নয়।’’

Advertisement

বস্তুত পাড়া বিধানসভায় জোট সঙ্গী কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের ভোট জড়ো হলে এখানে লড়াইটা শাসকদলের পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে। তা বুঝেই এ দিন পাড়ায় অভিষেক রণংদেহী মেজাজে ওই বক্তব্য রাখেন বলে রাজনীতি নিয়ে ওয়াকিবহাল মানুষজনের ধারণা। যদিও দুপুরের চড়া রোদে পুরুলিয়ার তৃণমূলের এই পর্যবেক্ষকের সভায় প্রত্যাশিত ভিড় চোখে পড়েনি। পরে বলরামপুরেও অভিষেকের সভা শুরুর আগে পর্যন্ত মাঠের ভিড় পাতলা ছিল। পরে মাঠের কিছুটা ভরে। যদিও তৃণমূল সূত্রের দাবি, আজ রবিবার থেকেই জেলার প্রতিটি কেন্দ্রে সভা করতে আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে কারণেই অভিষেকের মাঠ ভরানোর জন্য বেশি সক্রিয় হননি দলের নেতা-কর্মীরা।

তৃণমূলকে যে এ বার সহজে ছাড়া হবে না এ দিনও বাঁকুড়ার মেজিয়া, রানিবাঁধ ও সিমলাপালের সভায় স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন সূর্যকান্তবাবু। কর্মীদের তিনি বলেন, ‘‘ধর্মনিরেপক্ষ, গণতান্ত্রিক জোটকে নিয়ে অ্যাঁ, ও, না এ সব করবেন না। ছোঁয়াছুঁয়ির বাছবিচার না করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করুন। সেই লড়াইটা হবে বুথে বুথে। তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনীর ভোটলুঠও রুখে দিতে হবে।’’ সূর্যবাবুর এই বক্তব্য শুনে জঙ্গলমহল থেকে বাঁকুড়ার শিল্পাঞ্চল মেজিয়াতেও জোটের কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা দেয়।

তিনি দাবি করেন, তৃণমূল রানিবাঁধ ও বান্দোয়ানের বিদায়ী বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম ও সুশান্ত বেসরাকে কিনে নিতে চেয়েছিল। গরু ছাগলের মতো ওঁরা বিক্রি হয়ে যায়নি। তৃণমূলকে চোরেদের দল, ঘুষখোরদের দল বলে অভিযুক্ত করে সূর্যবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে চোরেদের সর্দার বলে কটাক্ষ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে এই ঘুষের, চুরির সংস্কৃতি ছিল না। এখন এই সরকারের আমলে এ সব দেখে আমাদের লজ্জা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী লজ্জা পাচ্ছেন না।’’

সূর্যবাবু নারদ-কাণ্ড নিয়েও তৃণমূলকে বিঁধেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নারদ-কাণ্ডে আপাতত ১৪ জনের মুখ উঠে আসছে। এর পিছনে ১৪০ জন রয়েছে। চোদ্দোশো জনও থাকতে পারেন। এখন আবার ওঁরা বলছে, ওটা ঘুষ নয়, অনুদান। তাহলে সেই অনুদানের রসিদ কোথায়? তৃণমূল নেতা-সাংসদদের বান্ডিল বান্ডিল টাকা নেওয়ার ভিডিওটা মোড়ে মোড়ে দেখান। জনগণ জানুক তৃণমূলের চরিত্রটা কী।’’

তবে, সব জায়গাতেই তিনি জোটের হয়ে ভোট করানোর জন্য কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রয়োজনে আপনারা ঝান্ডা ছেড়ে মানুষের কাছে যান। তাঁদের গিয়ে বোঝান, তৃণমূলকে নয়, এই মহাজোটকে ভোট দিতে হবে।’’ বিকেলে সূর্যবাবুর রানিবাঁধের বীরসা বাজারের সভা এবং রাতে সিমলাপালের লাল ময়দানের সভাতেও জোটের কর্মীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক দিন পরে এই জেলায় সিপিএমের হেভিওয়েট নেতাদের সভায় এমন ভিড় দেখে অনেক বাম ও কংগ্রেস কর্মীকেই কিছুটা উজ্জীবিত মনে হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement