ফাইল চিত্র।
কখনও বলেন তিনিই সব কেন্দ্রে দলের প্রার্থী। আবার কখনও বলেন, ‘‘আমার ভোট আমাকে দিন’’। ‘একটাই পোস্ট বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট’— বিরোধীদের এই শব্দবাণে বিদ্ধও হন কখনও। তবে তিনিই যে দলের মুখ, তাঁকে দেখেই যে মানুষ ভোট দেন—তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ভোটের দেওয়াল লিখনে। দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম দেওয়ালে বড়বড় করে লেখে ভোট দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। দেওয়াল বার্তার এই ছবি চন্দ্রকোনা রোডের কড়সা অঞ্চলে।
শালবনি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে চন্দ্রকোনা রোডের কড়সা অঞ্চল। গুইয়াদহ, কড়সা, ছোটতাড়া, বড়তাড়া-সহ একাধিক এলাকায় দেওয়ালে দেওয়ালে তৃণমূল কর্মীরা দলের প্রতীক এঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বড় অক্ষরে লিখে ভোট দেওয়ার আবেদন করেছেন। কোথাও লেখা হয়েছে— আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনীত প্রার্থীদের এই চিহ্নে ভোট দিন। আবার কোথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম-সহ তাঁর বক্তব্যের লাইন তুলে ধরে তাঁর মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করার আবেদন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, দলের অন্তর্কলহের বিষয়টা খোদ দলনেত্রী মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও রয়েছে। একটি কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে একাধিক নাম উঠে আসছে। দ্বন্দ্বের বিষয়টি আঁচ করে কিছুদিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ‘আমার ভোট আমাকে দিন’ বলে মানুষের কাছে আবেদন করেছিলেন। যেমন তিনি গত ২০১৬ বিধানসভার ভোটের আগে ‘২৯৪টা কেন্দ্রেই তিনিই প্রার্থী’ বলে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন। মানুষও কে প্রার্থী তা না দেখে মমতাকে দেখেই ভোট দিয়েছিল।
এ বার তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। রাজ্যে ‘পরিবর্তনের পরিবর্তন’ স্লোগান তুলেছে গেরুয়া শিবির। দু’বছর আগে লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে বিজেপির উত্থান ভাবাচ্ছে শাসকদলকে। এই অবস্থায় প্রার্থী পদ নিয়েও দলের অন্দরে শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি। শালবনি বিধানসভা কেন্দ্রেও প্রার্থী তালিকায় উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি নাম। ভোটের আগে শেষপর্যন্ত প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ না বাড়ে, সে জন্য চূড়ান্ত নাম ঘোষণার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লেখে দেওয়াল ভরাচ্ছেন তৃণমূল স্তরের কর্মীরা।
দলের কয়েকজন কর্মী বলেন, ‘‘পদ পেতে, বিধায়ক-সাংসদ হতে দলের উচ্চস্তরের নেতারা যেভাবে আকচাআকচি করেন তা খুবই দৃষ্টিকটূ লাগে। আমরা কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই দল করি। তাই মানুষের কাছে বলি দিদিকে দেখে ভোট দিন।’’ তৃণমূলের কড়সা অঞ্চলের সভাপতি মইদুল খান বলেন, ‘‘মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দেন, তাই কে প্রার্থী হবে তার অপেক্ষায় না থেকে কর্মীরা মুখ্যমন্ত্রীর নাম বড় বড় অক্ষরে লেখেই দেওয়াল ভরিয়েছেন।’’ অঞ্চলের ২০ টা বুথেই মমতার নাম দিয়ে এরকম দেওয়াল লেখা হয়েছে বলে তিনি জানান। যদিও বিজেপি একে খোঁচা দিতে ছাড়েনি। চন্দ্রকোনা রোডের প্রবীণ বিজেপি নেতা ধীমান কোলে বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এতটাই প্রকট যে, প্রার্থীর নাম না লেখে দলনেত্রীর নাম দিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। মানুষ এসব চালাকি ধরে ফেলেছেন।’’