ভাবাচ্ছে জঙ্গলমহলের চার কেন্দ্রে ভোটের বেশি হার

ভোটার খাইয়েও স্বস্তিতে নেই তৃণমূল

দু’টাকার চালে বাজিমাত, নাকি নারদ-হুলে কুপোকাৎ! পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে ভোট মিটতেই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। চৈত্রের তাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমজনতার কৌতূহলও চড়ছে। তৃণমূল নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, “সব আসনে ঘাসফুলের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।”

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩২
Share:

ভোটের দিন সকাল থেকে লম্বা লাইন ছিল জঙ্গলমহলের বিভিন্ন বুথে। বিনপুরে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

দু’টাকার চালে বাজিমাত, নাকি নারদ-হুলে কুপোকাৎ!

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে ভোট মিটতেই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। চৈত্রের তাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমজনতার কৌতূহলও চড়ছে। তৃণমূল নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, “সব আসনে ঘাসফুলের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।” তবে দলের অন্দরে কিন্তু আশঙ্কার চোরাস্রোত বইছে। কারণ, প্রদত্ত ভোটের হার বেশি।

২০১১-র বিধানসভা ও ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ভোটদানের হার কিছুটা কমলেও জঙ্গলমহলের চারটি আসন ঝাড়গ্রাম, বিনপুর, গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রামে এ বারও ৮০%-এর বেশি ভোট পড়েছে। তৃণমূলের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পক্ষেই এই বিপুল সমর্থন। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি চূড়ামণি মাহাতোর কথায়, “দু’টাকা কিলো চাল, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজ সাথীর সাইকেলের মতো গত পাঁচ বছরে জঙ্গলমহলের মানুষকে সার্বিক ভাবে অজস্র পরিষেবা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহলে মাত্র পাঁচ বছরে যে ধরণের নিবিড় উন্নয়ন-কাজ হয়েছে, তাতে এলাকার মানুষ তৃণমূলের উপরই ভরসা রেখেছেন।” যদিও বিরোধীদের যুক্তি হল, অতীতে দেখা গিয়েছে, বেশি ভোট পড়লে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটা শাসক দলের বিরুদ্ধে যায়।

Advertisement

২০১১-তে ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রামে তৃণমূলের বিপুল জয় এসেছিল। কিন্তু সে বার পরিবর্তনের ঝড়ে ৮২% ভোটদানের পরেও বিনপুরের বামদুর্গ অটুট ছিল। এ বার সেখানে ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে শাসক দল। ভোট-পর্ব মেটার পরেই আটজন সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী পরিবেষ্টিত হয়ে বেলপাহাড়ি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বংশীবদন মাহাতো জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা দলনেত্রীকে বিনপুর আসন উপহার দিচ্ছি।” তবে দলেরই নিচুতলার কর্মীরা বলছেন, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

বেলপাহাড়ির শিমুলপাল, বাঁশপাহাড়ি, ভুলাভেদা, সন্দাপাড়া ও শিলদার মতো কয়েকটি অঞ্চলে বামেদের নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। এ বার ওই সব এলাকায় ভোটারদের মাংসভাত খাইয়ে হাতে টাকা গুঁজেও তৃণমূল স্বস্তিতে নেই। এর অন্যতম কারণ, নারদের ঘুষ ভিডিও। শিমুলপালের এক তৃণমূল নেতা মানলেন, “গ্রামে গ্রামে এখন টিভি। সেখানে সারদা-নারদ কারও অজানা নয়। ফলে টেনশন তো হচ্ছেই।” বিরোধীরা আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পঞ্চায়েতে সরকারি প্রকল্পের টাকা লুঠ, একশো দিনের কাজ করেও মজুরি না পাওয়ার মতো বিষয়গুলিও ভোটে প্রভাব ফেলেছে। বেশির ভাগ বুথে সকাল সকালই গড়ে ৬৫-৭০ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে। এমনকী একদা মাওবাদী প্রভাবিত এলাকাতেও হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছেন মানুষ।

এই অবস্থায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, বিনপুরে যদি ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর প্রার্থী বিরবাহা হাঁসদা তৃণমূলের ভোট কাটেন তবে সিপিএমের দিবাকর হাঁসদার জয় সহজ হবে। কিন্তু বিরবাহা যদি আদিবাসী ভোট কাটেন তাহলে কিন্তু তৃণমূলের পোয়াবারো। ঝাড়গ্রামে প্রার্থী আবার বিরবাহার মা চুনিবালা। বাম-সমর্থন সঙ্গে থাকায় লালগড় ব্লকের রামগড়, কাঁটাপাহাড়ি, ধরমপুর, বৈতা, নেপুরা অঞ্চল এবং ঝাড়গ্রাম ব্লকের সাপধরা, রাধানগর, বাঁধগোড়া ও মানিকপাড়া এলাকায় চুনি ভাল ভোট পেয়েছেন বলে অনুমান। তার উপর তৃণমূল প্রার্থী সুকুমার হাঁসদার বিরুদ্ধে কর্মীদের একাংশ অন্তর্ঘাত করেছেন বলে দলের অন্দরে গুঞ্জন। তবে কংগ্রেসের সুব্রত ভট্টাচার্য এবং বিজেপি-র অজয়কুমার সেন বেশি ভোট কাটলে সুকুমারবাবুর জয়ের পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে।

গোপীবল্লভপুর আসনে তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো এবং নয়াগ্রাম আসনের তৃণমূল প্রার্থী দুলাল মুর্মুরা এ বারও বড়সড় ব্যবধানে জিতবেন বলে আশাবাদী। নয়াগ্রামে বিজেপি ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে। ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের দাবি, “নয়াগ্রামের ২৬২টি বুথের মধ্যে ১৭০টিতে বিজেপি-র ফল ভাল হবে।”

সব মিলিয়ে ভোটের বেশি হার বিরোধী শিবিরের আশা জিইয়ে রাখছে। সরাসরি জেতার কথা না বললেও সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেন, কংগ্রেসের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যদের ধারণা, “লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে। যেই জিতুক ব্যবধান বেশি হবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement