থাক রোদ্দুর, দিদির সভায় ভিড় জমাতে মরিয়া নেতারা

কানে চাপা ফোনে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন শোনাচ্ছে গলাটা— ‘‘লোক ভর্তি বাস চাই কিন্তু, খেয়াল রাখিস সাগরদিঘির মতো যেন সভা ফাঁকা না থাকে, গর্দান যাবে কিন্তু!’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৬
Share:

অপেক্ষায়। করিমপুরে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

কানে চাপা ফোনে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন শোনাচ্ছে গলাটা— ‘‘লোক ভর্তি বাস চাই কিন্তু, খেয়াল রাখিস সাগরদিঘির মতো যেন সভা ফাঁকা না থাকে, গর্দান যাবে কিন্তু!’’

Advertisement

কে গর্দান নেবেন ভাই? মুখ গম্ভীর, হাসি মুছে একটু ঘামও কপাল থেকে চেঁছে পেলছেন রুমাল দিয়ে। জেলার তাবড় তৃণমূল নেতাটি মাস কয়েক আগেও ছিলেন ঘোর অধীর-ঘেঁষা। এ বার তাঁরই হাতে মাঠ সাজানোর দায়িত্ব।

কেমন খরচ পড়ল? একটু অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছেন বোধহয়। দুপুর রোদে চারপাশ দেখেও নিচ্ছেন। তার পর কিঞ্চিৎ ফিসফিস করে বলছেন, ‘‘খরচের কথা কি বলতে আছে। নির্বাচন কমিশনের কান ম্যাড়াপের বাঁশেও লেপ্টে আছে!’’

Advertisement

সরাসরি না কবুল করছেন না বটে, তবে ম্যাড়াপের যেমন কান আছে তেমনই তৃণমূলেরও রয়েছে হাজারো মুখ। তাঁদেরই এক জন জানাচ্ছেন, বাস-ট্রাক মিলিয়ে প্রায় কয়েক লাখ। সঙ্গে রয়েছে বাঁশ-ত্রিপল-ডেকরেটরের খরচ, তার উপর খাওয়া দাওয়া, তার উপর...শেষ হচ্ছে না।

দিন চারেক আগে মালদহ ফেরত দলনেত্রী নেমেছিলেন সাগরদিঘির মাঠে। দুপুর রোদে মমতা আসছেন শুনে ঘণ্টা কতিনেক আগে থেকে কেঁদে কেটে তৃণমূল নেতারা মাঠ ভরানোর চেষ্টা করেছিলেন। প্রার্থী, খোদ সুব্রত সাহা প্রায় বিধানসভা কেন্দ্রে সুব্রত সাহাকে প্রায় কাঁদো কাঁদে গলায় মাইকে বলতে শোনা গিয়েছিল— এসডিপিও সাহেব, প্লিজ বাসগুলো ছেড়ে দিন মাঠে লোক নেই। দেখতে খুব কারাপ লাগছে।

তা সে সভাতেও খরচ কম হয়নি। এখন প্রশ্ন, মাঠ ভরানোর জন্য এমন খরচ করেও লাভটা কী হচ্ছে, লোক কোথায়?

ডোমকেলর অদূরে জলঙ্গির মাঠে অবশ্য মাঠেও তাঁবু পড়েছে। বাঁশ থেকে শালের খুঁটি— বিরাম নেই। কিন্তু সেই সাজানো ম্যাড়াপের আড়ালে মানুষ আসবে তো? প্রশ্ন উঠছে সেখানেও। স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলছেন, ‘‘হেলিকপ্টারটা আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে যাবে তো? তাতেই দেখা হয়ে যাবে মুখ্যমন্ত্রীকে। এই রোদে কে যাবে মাঠে!’’

শনিবার, পড়শি জেলা নদিয়ার করিমপুরেও আসছেন দিদি। দলীয় প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে সমাবেশ। দলের এক কর্মী বলছেন, ‘‘দুই দিদির সভা!’’ গ্রামের পথে গাটে হেঁটে এই কদিনেই মহুয়া আশপাশের গাঁ-গঞ্জে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তা বলে মাঠে লোক হবে তো?

গত দু’দিন ধরে তাপমাত্রা কখনও চল্লিশ থেকে বিয়াল্লিশ। দলের এক কর্মীই বলছেন, ‘‘কোন মুখে লোক আনতে বলব বলুন তো, মানুষ তিষ্ঠোতে পারছে না।’’ মঞ্চ থেকে প্রায় একশো মিটার দূরে তৈরি করা হয়েছে হেলিপ্যাড। তৃণমূল দল সুত্রে জানা গিয়েছে, এই হেলিপ্যাডেই নামছেন মমতা। তারপর সেখান তেকেই ফের উড়ানে জলঙ্গি। এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘রোদ্দুরে লোক না আসতে চাইলেও কপ্টার দেখতে তো আসবে!’’ সেই ভরসাতেই বুক বাঁধছে করিমপুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement