নারদের হুলে মুখরক্ষার পথ পাচ্ছে না দিশাহারা তৃণমূল

প্রথম দাবি, ভিডিও ফুটেজই জাল। দ্বিতীয় দাবি, দুবাই হয়ে বিদেশ থেকে টাকা এসেছে। তার অনেকটাই আবার কালো টাকা! তৃতীয় দাবি, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম এমন কাণ্ডে জড়াতে পারে, শাসক দলের নেতৃত্ব এমনটা বিশ্বাসই করেন না!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

স্টিং অপারেশনে বিদ্ধ তৃণমূলকে কটাক্ষ করে পোস্টার। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় বামেদের মিছিলে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রথম দাবি, ভিডিও ফুটেজই জাল। দ্বিতীয় দাবি, দুবাই হয়ে বিদেশ থেকে টাকা এসেছে। তার অনেকটাই আবার কালো টাকা! তৃতীয় দাবি, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম এমন কাণ্ডে জড়াতে পারে, শাসক দলের নেতৃত্ব এমনটা বিশ্বাসই করেন না!

Advertisement

নারদ নিউজ পোর্টালের স্টিং অপারেশনের হুল কী ভাবে সামলানো যাবে, তা নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে এক এক রকম ঢালের আড়াল নিচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা। ভোটের মুখে বিরোধীদের হাতে চলে-আসা এমন ধারালো অস্ত্রের মোকাবিলায় শাসক দলের প্রথম কৌশল ছিল পাল্টা আক্রমণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও পর্যন্ত সেই কৌশল ধরে রেখে ঘটনাকে বিরোধীদের ‘ষ়়ড়যন্ত্র এবং কুৎসা’ বলেই দাবি করছেন। সেই সূত্রেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, ষড়যন্ত্রই হলে তৃণমূল কেন ঘটনার তদন্ত চাইছে না? এই প্রশ্নের মুখেই এক এক রকম যুক্তি দিয়ে নিজেদের জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন মমতার সৈনিকেরা!

বিরোধী শিবিরের এক নেতার কটাক্ষ, ‘‘প্রথমে ছিল জোটের চাপ। এখন হয়েছে নোটের চাপ! তাই কেলেঙ্কারি আড়াল করতে সারদা-কাণ্ডের মতোই এখন আবার পথে নামতে হচ্ছে শাসক দলকে!’’ ঘুষ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের শাস্তি চেয়ে বৃহস্পতিবার ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মিছিল করে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, হাফিজ আলম সৈরানি, মনোজ ভট্টাচার্য, প্রবীর দেবেরা যখন মিছিলে হাঁটছেন, লেনিন সরনির দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে উৎসুক জনতাকে। আর তৃণমূলের তরফে ডাক দেওয়া হয়েছে, এমন ‘অপপ্রচারে’র প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত তারা পাল্টা মিছিল করবে। যার প্রেক্ষিতে সূর্যবাবু কটাক্ষ করেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সৎসাহস থাকলে মিছিলে আবার সেই ‘আমরা সবাই চোর’ প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে হাঁটুন!’’

Advertisement

আর একটি প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু যেমন এ দিনও প্রশ্ন করেছেন, ‘‘যে ভিডিও ফুটেজকে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দল ‘বানানো’ বলে দাবি করছেন, সেটি পরীক্ষা করাতে তাঁদের অসুবিধা কোথায়? তাঁরা রাজ্য শাসনের সমস্ত নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন!’’ তাঁর যুক্তি, ভোটের সময়ে এই জন্যই তাঁরা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়ে দাবি করেছেন, যখন শাসক দলের ‘অনুমোদিত এজেন্ট’ হিসাবে এক পুলিশ সুপারকে ফুটেজে যেখানে টাকা নিতে দেখা যাচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে কমিশনকে অনেক বেশি সক্রিয় হতে হবে টাকার খেলা আটকাতে।

বিরোধীদের এই চাপের মুখেই শাসকের বক্তব্যে স্ব-বিরোধিতা চলে আসছে। তারাপীঠে পুজো দেওয়ার পরে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেমন প্রথমে দাবি করেন, ‘‘এ রকম বহু ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করার শক্তি দলের আছে।’’ তা হলে তদন্ত চাইছেন না কেন? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘যেটা বিশ্বাস করি না, আমরা তার তদন্ত চাইব কেন? নিজেদের উপরে আস্থা আছে!’’ পার্থবাবুরই সতীর্থ শোভন চট্টোপাধ্যায় আবার ক্যানিংয়ে দাবি করেন, ‘‘বিদেশি টাকার এত উৎস কোথা থেকে এল, তা দেখা দরকার!’’ নানা মন্তব্যে দলের দিশাহারা দশা স্পষ্ট হচ্ছে বুঝে বিকালে আবার তৃণমূল ভবনে পার্থবাবুই আগের বক্তব্য শুধরে বলেন, ‘‘এথিক্স কমিটি হয়েছে। তারাই যখন তদন্ত করছে, আলাদা ভাবে আর এর তদন্ত চাইব কেন? এটাই বলতে চেয়েছি।’’ শুনে সূর্যবাবুরা বলেছেন, এথিক্স কমিটির কাছে বিষয়টি চলে গিয়েছে— লোকসভার এই সিদ্ধান্তকে ঢাল করেই অন্য তদন্ত এড়াতে চাইছে তৃণমূল। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তৃণমূলকে সেই সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে বামেদের দাবি।

ফুটেজে যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে মুকুল রায় রাজ্যসভার সাংসদ। লোকসভার এথিক্স কমিটি কোনও শাস্তির সুপারিশ করলেও তিনি সে সবের বাইরে থেকে যাবেন কি না, প্রশ্ন উঠেছে। এই জন্যই বামেরা রাজ্যসভাতেও এথিক্স কমিটির কাছে অভিযোগটি পাঠানোর দাবি করছে। মুকুল এ দিন বলেছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত রাজ্যসভার এথিক্স কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠানো হয়নি। ফলে, এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার নেই। কিন্তু যদি বিষয়টি আসে, তা হলে নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগ করাই উচিত।’’

তৃণমূলের অভিযুক্ত লোকসভার সাংসদদের কয়েক জনকে এ দিন তৃণমূল ভবনে দেখা গিয়েছে। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ও কাকলি ঘোষ দস্তিদার বৈঠক করেছেন মুকুলের সঙ্গে। তবে বেরোনোর সময়ে প্রসূনের দাবি, ‘‘সংসদের সর্বোচ্চ কমিটি বিষয়টি দেখছে, এখন এ নিয়ে কিছু বলব না।’’ আর অস্বস্তি আড়াল করতে সন্দেশখালিতে প্রচারে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘পঁচিশ মিনিটের জাল সিডি নয়, পাঁচ বছরের উন্নয়ন দেখে মানুষ ভোট দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement