খাতায় থাকুন দাদা-বৌদি। মাথায় সীতারাম!
মাথায় এবং অবশ্যই মঞ্চে! বিধানসভা ভোটের প্রচারে সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেডের কাছে এখন চাহিদা তুঙ্গে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির। নিজের রাজনৈতিক পুঁজি কার্যত বাজি রেখে দলের মধ্যে লড়াই করে যিনি আদায় করে এনেছিলেন কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার সবুজ সঙ্কেত। বাংলায় প্রচার শুরু করে তাঁরই প্রথম গন্তব্য অশোক ভট্টাচার্যের শিলিগুড়ি। যেখান থেকে উঠে এসেছিল ‘শিলিগুড়ি মডেল’। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘প্রথমে উত্তরবঙ্গে যেতে হবে। তার পরে দক্ষিণবঙ্গে যেখানে যেমন সূচি থাকবে, যাব।’’
আর হাল্কা মেজাজে ‘দাদা-বৌদি’ বলে বোঝানো হয় যাঁদের?
তাঁদের জন্য কোনও প্রচার সূচিই এখনও তৈরি হয়নি! কারণ দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট ও তাঁর ঘরণী বৃন্দাকে বিধানসভার ভোটের প্রচারে পেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না সিপিএমের বেশির ভাগ জেলা কমিটিই!
রাজ্যে প্রথম দফার ভোট প্রায় দোরগোড়ায়। ভাঙা হাওয়াতেও বিজেপি আনতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকে। কংগ্রেসের ভাবনায় আছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। কিন্তু সিপিএমের ‘তারকা প্রচারক’দের কেউ সে ভাবে এখনও মাঠেই নামেননি! এবং সেই অনুপস্থিত তারকাদের তালিকায় উজ্জ্বল দাদা-বৌদির নাম! তারকা প্রচারকদের তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার সময়ে কারাট দম্পতির নামও লিখেছে রাজ্য সিপিএম। দলীয় সূত্রে বলাও হচ্ছে, সুযোগ মতো কারাট দম্পতি আসবেন নিশ্চয়ই! কিন্তু একান্তে দলেরই অন্য সূত্র বলছে, তেমনটা হলেও হবে শুধু মুখরক্ষার খাতিরে!
আগে যাঁর কথার উপরে কথা বলার সাহসই ছিল না আলিমুদ্দিনের, এখন তাঁকেই কার্যত এড়িয়ে চলতে চাইছে কেন বঙ্গ সিপিএম?
কারণ, তৃণমূলের মোকাবিলা করতে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের বোঝাপড়া একেবারেই চায়নি কারাট-শিবির। ইয়েচুরিকে লড়তে হয়েছে তাঁদের সঙ্গেই। বাংলায় সিপিএমের মনোভাব গোড়া থেকেই ছিল জোটের পক্ষে। কংগ্রেসের হাত ধরে মাঠে-ময়দানে নেমেও পড়েছেন নিচু তলার কর্মীরা। জেলায় জেলায় সিপিএম নেতা-কর্মীদের বড় অংশের আশঙ্কা, যাঁরা সমঝোতার বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁরা এই সময়ে যদি বক্তৃতা বা সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বেফাঁস কিছু বলে ফেলেন!
আনুষ্ঠানিক ভাবে সিপিএমের নির্বাচনী জনসভা শুরু হচ্ছে আজ, শুক্রবার থেকেই। প্রকাশ বা বৃন্দা কেউই পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের নির্বাচনী কর্মসূচি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের বক্তব্য, ‘‘এখনও চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি। লম্বা ভোট-পর্বে প্রচার কৌশলের অনেক কিছু এখনও বাকি। নীতীশ কুমার, লালু প্রসাদ বা শরদ পওয়ারের মতো সর্বভারতীয় নেতাদেরও প্রচারে আনার চেষ্টা হচ্ছে।’’
পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকারকে বক্তা হিসেবে পেতে আগ্রহী উত্তর ২৪ পরগনা-সহ কয়েকটি জেলার সিপিএম নেতারা। যদিও নিজের রাজ্যে কংগ্রেসই মানিকবাবুদের প্রতিদ্বন্দ্বী। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘‘কলকাতায় প্রচারে যাওয়ার বিষয়ে এখনও কিছু ঠিক হয়নি। আমাদের রাজ্যে এখন বিধানসভার অধিবেশন চলছে। আপাতত তা নিয়ে কিছু ব্যস্ততা আছে।’’
কংগ্রেসের একাংশ চায়, সনিয়া বা রাহুল গাঁধীর কোনও প্রচার-সভায় হাজির থাকুন ইয়েচুরি। যাতে বোঝাপড়ার বার্তা আরও স্পষ্ট হয়। যদিও এমন প্রস্তাবে এখনও রাজি নয় সিপিএম। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘কংগ্রেসের কোনও প্রার্থীর সঙ্গে একই সভায় আমাদের নেতারা থাকতে পারেন। কিন্তু দু’দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে এক মঞ্চে হাজির করা মুশকিল! তা হলে তাতে সেই নেতাদের জোটের ছাপ পড়ে যাবে। আমরা তো বলছি মানুষের জোট, তাই না!’’