বৃহস্পতিবার রাতে খড়্গপুর থানার সামনে চলছে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির পথসভায় হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে খড়্গপুর শহরের নিউ সেটলমেন্টের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের সমর্থনে সভা চলাকালীন হামলা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, কয়েকজন মহিলা এসে সভা বন্ধের দাবি জানায়। কয়েকজন যুবক সভাস্থলে ভাঙচুর চালায় বলেও অভিযোগ। হামলাকারী যুবকদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলেও বিজেপি কর্মীদের দাবি। ঘটনার প্রতিবাদে ওই দিন রাতেই দোষীদের গ্রেফতার করার দাবিতে টাউন থানা চত্বরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। উপস্থিত ছিলেন প্রার্থী দিলীপবাবুও। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করে।
গত বছর খড়্গপুর পুরসভার নির্বাচনের ওই ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই বিজেপির হয়ে ভোটে লড়েনএলাকায় রেল মাফিয়া হিসেবে পরিচিত শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী পূজাদেবী। জিতেও যান তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে ওই ওয়ার্ডেই দিলীপবাবু সমর্থনে প্রচার চলছিল। যদিও দিলীপবাবু নিজে সভায় ছিলেন না। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের প্ররোচণায় এই হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার পরই সভাস্থল ছেড়ে বিজেপির নেতা-কর্মীরা থানার সামনে জড়ো হন। খবর পেয়ে থানায় যান দিলীপবাবুও। শ্রীনুকে গ্রেফতার করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা।
ঘটনার খবর পেয়ে ওই দিন রাতেই থানায় যান এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর সঙ্গে বৈঠক করেন এসডিপিও। রাতেই থানা চত্বরে কয়েকশো বিজেপি কর্মীর খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়। থানা চত্বরে বসেই ভক্তিসঙ্গীত গান দিলীপবাবু। চলে আসে গিটারও। এ ভাবেই সারারাত থানার সামনেই বসে কাটান বিজেপির কর্মীরা। ঘটনায় পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করলেও শ্রীনু এখনও অধরা। পুলিশের দাবি, শ্রীনু পলাতক। দিলীপবাবু বলেন, “মূল অভিযুক্ত শ্রীনু নায়ডুকে গ্রেফতার করার দাবি আমরা জানিয়েছি। পুলিশ আশ্বাস দেওয়ায় আপাতত অবস্থান তুলে নেওয়া হচ্ছে। কারণ নির্বাচনী প্রচার শেষ হতে আর কয়েক ঘণ্টা বাকি।’’ তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয় সামনে রেখেই আমরা প্রচার চালাব। পুলিশ তার মধ্যে শ্রীনু নায়ডুকে গ্রেফতার না করলে শহর অচল করে দেওয়া হবে।”
গত পুর নির্বাচনের আগেও পুলিশ-মাফিয়া আঁতাতের অভিযোগে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। পুর নির্বাচনের আগে বোমাবাজির অভিযোগে শ্রীনুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুরবোর্ড গঠনের আগে খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল জেলে গিয়ে শ্রীনুর সঙ্গে দেখা করেন বলে তৃণমূলের এক সূত্রে খবর। দিন কয়েকের মধ্যেই জামিনে মুক্তি পায় শ্রীনু। তারপরেই শ্রীনুর স্ত্রী বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। পূজার সঙ্গে বিজেপির আরও ৪ জন কাউন্সিলরও তৃণমূলে যোগ দেন।
বৃহস্পতিবার রাতে থানা চত্ত্বরেই দাঁড়িয়েই দিলীপবাবু বলেন, “এই শহরে পুলিশ ও মাফিয়া মিলে আমাদের কাউন্সিলরদের তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করেছে। সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই আমি খড়্গপুরে প্রার্থী হয়েছি। আমি এখান থেকে মাফিয়ারাজ খতম করেই যাব।” প্রশ্ন উঠছে, গত পুর নির্বাচনে শ্রীনুর স্ত্রীকে তো আপনারাই টিকিট দিয়েছিলেন? দিলীপবাবুর উত্তর, ‘‘তখন আমরা প্রার্থীকে দেখে টিকিট দিয়েছিলাম। কিন্তু বন্দুকের নলের মুখে সবাই বশ্যতা স্বীকার করেছে। সেই অবস্থার বদল করতেই আমি এখানে এসেছি। শ্রীনু নায়ডু গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমরা থানায় বসে থাকব।”
শুক্রবার সকালে এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল বলেন, “মামলা যখন হয়েছে তখন শ্রীনু নায়ডুকে গ্রেফতার করতে হবেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আপাতত চারজনকে গ্রেফতার করেছি। শ্রীনুর খোঁজ চলছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।”