police

সাহস জোগাতে গিয়ে ঝাঁঝানি শুনল পুলিশ

মহিলাদের ঝাঁঝের সামনে পুলিশ কর্তাদেরও মুখে বিশেষ কথা বেরোয়নি।

Advertisement

নির্মল বসু 

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২১ ০৬:৫৭
Share:

আশ্বাস: ভোটারদের সঙ্গে কথা। নিজস্ব চিত্র।

অ্যাসল্ট রাইফেল কাঁধে নিয়ে মশমশ করে পুর এলাকার পথ ধরে যাচ্ছিলেন আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানেরা। সঙ্গে পুলিশ কর্তারা। ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে বেরিয়েছেন।

Advertisement

কিন্তু সুর কাটল, সে কথা মুখে বলতে গিয়ে। ‘‘নিজের ভোট নিজে দেবেন, ভয় পাবেন না। কেউ ভয় দেখাতে এলে জানাবেন আমাদের’’— পুলিশ কর্তার মুখে এ কথা শুনেই রে রে করে উঠলেন পাড়ার মেয়ে-বৌরা। পুলিশ, জওয়ানদের শুনতে হল, ‘‘ভোটের আগের রাতেই তো এখানে ভোট হয়ে যায়। বাড়ি বাড়ি ঢুকে রিভলভার উঁচিয়ে চমকে যায় ওরা। বলে, ভোটের দিন বাড়ি বসে থাকো। বেরোতে হবে না।’’ এক মহিলা বলে উঠলেন, ‘‘শেষ কবে কোন ভোটে আঙুলে কালি লেগেছে মনে করতে পারি না। আমাদের ভোট এ ভাবেই হয়। আপনারা আপনাদের কাজ করতে এসেছেন করুন। কিন্তু ভোট দিতে যেতে বলবেন না!’’

মহিলাদের ঝাঁঝের সামনে পুলিশ কর্তাদেরও মুখে বিশেষ কথা বেরোয়নি।

Advertisement

কিন্তু ভয় দেখায় কারা?

এ প্রশ্নের জবাব দেননি কেউ। এক মহিলা শুধু বললেন, ‘‘সে কথা সকলে জানে। আপনারাই খোঁজ নিয়ে দেখুন না!’’ রবিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে রুটমার্চ করতে বেরিয়েছিল বসিরহাট পুলিশ। ছিলেন পুলিশ জেলার আধিকারিকেরাও। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসিরহাটের বিভিন্ন প্রান্তে ৪শোর বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে নিয়ে রুটমার্চ হয়েছে। ছিলেন বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ সিংহ মহাপাত্র এবং বসিরহাট থানার আইসি সুরিন্দর সিংহ। বাহিনীকে দেখে বহু এলাকায় ঘরে ঢুকে পডেছেন লোকজন। সুনসান পথঘাট দেখে পুলিশকর্তারা তো বটেই, বাহিনীর জওয়ানেরাও বিস্মিত।

বসিরহাট পুরসভা এলাকার মাহেষ্যপাড়া দিয়ে জওয়ানেরা যাওয়ার সময়ে কিছু লোকজন ছিল এলাকায়। তাঁদের ডেকে এক পুলিশ কর্তা ‘নিজের ভোট নিজে দেওয়া’র বাঁধা বয়ান শোনাতে গিয়েছিলেন। জ্যোৎস্না বিশ্বাস, অপর্ণা সরকাররা জানিয়ে দেন, এ সব কথা তাঁদের শুনিয়ে লাভ নেই। এই এলাকায় ভোটের আগের রাতেই ‘যা হওয়ার হয়ে যায়।’ পঞ্চায়েত, পুরসভা, লোকসভা— কোনও ভোটেই তাঁরা বুথে যেতে পারেননি বলে জানালেন অনেকে। যদি বা কেউ গিয়েছেন, সেখানে গিয়ে ‘দাদাদের’ গম্ভীর গলায় বলতে শুনেছেন, ‘‘ভোট পড়ে গিয়েছে। বাড়ি ফিরে যাও।’’

তবে ভোটের এত আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসায় দুষ্কৃতীরা কিছুটা কোণঠাসা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন ভোটারদের কেউ কেউ। রাজেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের চণ্ডীগড়ি গ্রামের কাসেদ আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামে গন্ডগোল, মারদাঙ্গা করায় মানুষ পঞ্চায়েতে ভোট দিতে পারেননি। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় লোকসভায় ভোট দিয়েছি। মনে হয় এ বার বিধানসভায় ভোট দিতে পারব।’’ পিঁফার ব্যাঙপুকুর গ্রামের আয়েশা বিবি, মমতাজ বিবি, আক্রম আলি, সফিকুল ইসলামেরা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের গ্রামে গন্ডগোল হয় না। নির্বিঘ্নে ভোট দেন সকলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement