সিঙ্গুরে ইয়েচুরি-অধীর, রাহুলের মঞ্চে ঋতব্রত

নেতারা বলতেন, উপর থেকে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যা হওয়ার, হবে। রাজ্যে বিধানসভা ভোট যত এগোচ্ছে, বাম-কংগ্রেসের জোট ঘিরে উৎসাহ তত বাড়ছে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০০
Share:

নেতারা বলতেন, উপর থেকে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যা হওয়ার, হবে। রাজ্যে বিধানসভা ভোট যত এগোচ্ছে, বাম-কংগ্রেসের জোট ঘিরে উৎসাহ তত বাড়ছে। সেই ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’র সঙ্গে তাল রেখেই এ বার মঞ্চ ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আরও তৎপর হচ্ছেন দুই শিবিরের নেতারা।

Advertisement

ভোটের প্রচারে নানা জেলায় একাধিক বার এক মঞ্চে এসেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মানস ভুঁইয়া, প্রদীপ ভট্টাচার্যেরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সূর্যবাবুর সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায়নি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে। এ বার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গেই একত্রে দেখা যেতে পারে অধীরকে। এবং দুই শিবিরের এই দুই নেতাকে এক জায়গায় এনে মিলিয়ে দিতে চলেছে যে বিন্দু, রাজ্য রাজনীতিতে তার তাৎপর্যও আলাদা! সব ঠিকঠাক চললে সিঙ্গুরের মাটিই জুড়ে দিতে পারে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পথ!

সিঙ্গুরে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ জোটের তরফে সিপিএম প্রার্থী রবীন দেবের সমর্থনে আগামী রবিবার প্রচারে যাওয়ার কথা ইয়েচুরির। সে দিন ওই কর্মসূচিতেই হাজির থাকতে পারেন অধীর। এই ব্যাপারে ইতিমধ্যে রবীনবাবুর সঙ্গে অধীরের কথাও হয়েছে। ভোটের আগে অধীর-রবীন রাতের পর রাত একসঙ্গে বসে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দর কষাকষি চালিয়েছিলেন। রবীনবাবু সিঙ্গুরে প্রার্থী হওয়ার পরে তাঁর হয়ে প্রচারে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল প্রদেশ সভাপতির। আবার কয়েক দিন আগে কলকাতায় প্রচারে এসেই ইয়েচুরি ঠিক করেছিলেন, এ বার তিনি সিঙ্গুরে যেতে চান। শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুরের কর্মসূচিই দু’পক্ষের দুই নেতার জন্য যৌথ মঞ্চ গড়ে দেওয়ার জমি তৈরি করে ফেলেছে।

Advertisement

ক্ষমতায় ফিরলে সিঙ্গুরের জমিতে শিল্প গড়ারই ঘোষণা করেছে সিপিএম। দু’দিন আগেই সোস্যাল মিডিয়ায় লাইভ চ্যাটে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু বলেছেন, সরকার গড়তে পারলে তাঁদের প্রথম চেষ্টা হবে সিঙ্গুরের ওই জমিতে টাটাকেই ফিরিয়ে আনা। কারণ, ন্যানো কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি এখন আর চাষের উপযুক্ত নেই। আদালতের বাইরে মামলার নিষ্পত্তি করে টাটাকে শিল্প গড়তে রাজি করাতে পারলে গোটা রাজ্যে শিল্পায়নের পক্ষেই ইতিবাচক বার্তা যাবে বলে মনে করেন সূর্যবাবুরা। সেই প্রেক্ষিতেই এ বার সিঙ্গুরের মানুষের মুখোমুখি হতে চান সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সেখানে উপস্থিত থাকলে একই সঙ্গে জোট সম্পর্কে আম জনতা এবং দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের আত্মবিশ্বাসও বাড়ানো যাবে।

সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘সনিয়া বা রাহুল গাঁধীর সভায় সচেতন ভাবেই সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকছেন না। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের কেউ এক মঞ্চে থাকলে অসুবিধা নেই। রাজ্য নেতারা তো ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিয়েছেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতাও বলছেন, ‘‘কোন সভায় কে থাকলেন, তার উপরে এখন আর জোট আটকে নেই। তবে দু’দলের শীর্ষ নেতারা একসঙ্গে উপস্থিত হলে অবশ্যই সকলের কাছে আরও বেশি সদর্থক বার্তা যায়।’’

এই সদর্থক বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যেই এ বার রাহুল গাঁধীর সভা নিয়ে নিজেই হস্তক্ষেপ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সিপিএম সূত্রের খবর, বসিরহাটে আগামী শনিবার রাহুলের সভায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম দেব যাতে উপস্থিত থাকতে পারেন, সেই রকমই পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্যই গৌতমবাবু সেখানে যেতে পারছেন না। তখন বুদ্ধবাবু-সূর্যবাবুরা ঠিক করেছেন, বসিরহাটে রাহুলের সভায় পাঠানো হবে সিপিএম সাংসদ ও রাজ্য কমিটির সদস্য ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কংগ্রেস সহ-সভাপতির এ বারের সফর-সূচিতে এই প্রথম সিপিএমের কোনও বর্তমান সাংসদকে (রাহুল যাঁকে সংসদে দেখেন) পাঠানো হচ্ছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘উত্তর ২৪ পরগনায় গত বার আমরা মাত্র তিনটি আসন পেয়েছিলাম। এ বার জেলায় ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই জোটের উপরে ভর করেই। জোটের জমি সব চেয়ে শক্ত বসিরহাটেই। সেখানে রাহুলের সভা গোটা জেলাতেই কাজে আসবে।’’ রাহুলের এ বারের সফরের দিন ইয়েচুরিও রাজ্যে থাকছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement