কাজের শহরে নারদের হুল, নিত্য দুর্ভোগ

বিকেলে ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহে যাওয়ার বাস ধরেছিলেন সুনন্দ দাস। আড়াই কিলোমিটার পথ যেতে তাঁর লেগেছে এক ঘণ্টারও বেশি। সৌজন্যে বিরোধী দলের মিছিল। স্টিং অপারেশনের ভিডিওয় টাকা নিতে দেখা গিয়েছে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের। সেই নেতা-মন্ত্রীদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার মিছিল করে বামেরা। তার জেরেই যানজটে আটকে ভোগান্তি হল সুনন্দবাবুর মতো অনেকের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০১:০৫
Share:

বিকেলে ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহে যাওয়ার বাস ধরেছিলেন সুনন্দ দাস। আড়াই কিলোমিটার পথ যেতে তাঁর লেগেছে এক ঘণ্টারও বেশি। সৌজন্যে বিরোধী দলের মিছিল। স্টিং অপারেশনের ভিডিওয় টাকা নিতে দেখা গিয়েছে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের। সেই নেতা-মন্ত্রীদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার মিছিল করে বামেরা। তার জেরেই যানজটে আটকে ভোগান্তি হল সুনন্দবাবুর মতো অনেকের।

Advertisement

আজ, শুক্রবারেও একই দুর্ভোগ পোহাতে হবে মহানগরের বাসিন্দাদের। কারণ, সেই মিছিল। এ বার শাসক দলের। ওই স্টিং-ভিডিও ছড়িয়ে তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে পাল্টা পথে নামছে তৃণমূল।

আক্ষরিক অর্থেই ‘পাল্টা’। এ দিন ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল থেকে লেনিন সরণি ধরে মৌলালি হয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়েছে বামেদের মিছিল। আজ, বিকেল সাড়ে চারটেয় শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মৌলালি হয়ে এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে পৌঁছবে তৃণমূলের ছাত্র-যুবদের মিছিল। শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে শুরু করে লেনিন সরণি এবং এস এন ব্যানার্জির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দিয়ে মিছিল যাওয়ায় প্রমাদ গুনছে পুলিশ। তাঁরা বলছেন, বিকেলে অফিস ফেরত ভি়ড় থাকে। সে সময়ে ধর্মতলার মোড় এবং রাস্তা আটকানোয় গাড়ি চলাচল ব্যাহত হবে। যার ফলে ভুগতে হবে সাধারণ মানুষকে।

Advertisement

অনেকেই বলছেন, ‘স্টিং অপারেশন’-এর ভিডিও টিভিতে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, হোয়্যাটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। বহু লোকেই তা বারবার দেখেছেন। তা নিয়ে সমাজের নানা মহলে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়াও হয়েছে। তার পরেও এ নিয়ে মিছিল করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলা কেন? বামেদের যুক্তি, কোনও প্রতিবাদ করতে হলে পথে নামতেই হবে।

একই প্রশ্ন উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধেও। তাঁরা দোষী কি দোষী নন, তা তো তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু নিজেদের নির্দোষ প্রমাণে রাজপথে মিছিল কেন? তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিরোধী দলের কুৎসা, কর্মসূচিহীন ভাবে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলকে আক্রমণের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমরা মিছিল করব।’’ কিন্তু তাতে তো মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে! পার্থবাবুর জবাব, ‘‘মানুষের কষ্ট আমরা বুঝি। মানুষের কষ্ট দেখার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময়ে তাদের পাশে আছেন। তাদের সঙ্গে আছেন।’’

অনেকে অবশ্য বলছেন, কাজের দিনে পথেঘাটে মিছিল করা বামেদের ক্ষেত্রে নতুন নয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে মিছিল বরদাস্ত করা হবে না। যদিও তিনি নিজেই বা তাঁর দল বারবারই ধর্মতলা চত্বরে মিছিল করেছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার মিছিলের সময়ে কিছু গাড়ি চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। মিছিল শেষ হওয়া মাত্রই তাড়াতাড়ি গাড়ি চলাচল শুরু করা হয়। তাতে অবশ্য পুরোপুরি বিপত্তি কাটেনি। এ দিনও একই কায়দায় সামাল দেওয়ার ভাবনাচিন্তা রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা বলছেন, এস এন ব্যানার্জিতে মিছিল ঢোকার পরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। ওই রাস্তার সঙ্গে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের মতো যে সব রাস্তার ক্রসিং রয়েছে, সেগুলি মিছিল যাওয়ার সময়টুকু বন্ধ করা হবে। তবে লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘এ সব পরিকল্পনা একেবারেই প্রাথমিক স্তরে। এখন অনেক ক্ষেত্রেই মিছিলের সময়ে পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনায় অদল-বদল করা হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement