—ফাইল চিত্র।
ঢাকায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভিবাসন কাউন্টারে গম্ভীর মুখে কাগজ-পত্র নাড়াচাড়া করছিলেন তরুণ অফিসার। তা থেকে পেশা এবং ভাষা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাটুকু তৈরি হওয়ার পরেই প্রথম জিজ্ঞাসা, ‘‘দিদি কি জিতছেন?’’
পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ে ওই তরুণ অফিসারের কৌতূহল কিছুটা মিটিয়ে বাংলাদেশের রাস্তায় নেমে দেখা গেল, গাড়িচালক হাসিনুল করিমেরও প্রশ্ন একই! এ বার পাল্টা প্রশ্ন, ‘কে জিতলে আপনাদের লাভ?’ মুজিব-শতবর্ষের উৎসবে মজে থাকা বাংলাদেশে এই সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের কোলাজ তৈরি হল বার বার। উৎসাহ, আগ্রহ চোখে পড়ল পড়শি দেশের গা-ঘেঁষা রাজ্যে ভোট আর তার সম্ভাব্য ফলাফল ঘিরে।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে তিস্তাকে ঘিরে সেই পুরনো আবেগ অন্তত প্রকাশ্যে আর নেই। যা পাঁচ-সাত বছর আগে ঢাকায় এসে দেখা যেত। তিস্তা-চুক্তি না-হওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তোলার প্রবণতা আগের তুলনায় কম। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়েও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এবং বিভ্রান্তি।
অনেকের প্রশ্ন, মোদী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্যই যদি আসেন, তাহলে টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর সমাধি দর্শনের পরে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে মন্দিরে যাবেন কেন? যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন, সেখানে এই বিষয়টি কি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়? এই সফরে কি ‘রথ দেখা ও কলা বেচা’ কিছুটা একই সঙ্গে করতে চাইছেন তিনি? তাতে কি কিছুটা লঘু হচ্ছে না মুজিব-উৎসবের গুরুত্ব?
মোদী নিজে সফর শুরুর আগে বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘প্রাচীন যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে মায়ের পুজো করতে আমি উদ্গ্রীব। এটি পুরাণ-বর্ণিত ৫১টি শক্তিপীঠের একটি। ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্যও আমি বিশেষ ভাবে মুখিয়ে। সেখান থেকেই শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর আধ্যাত্মিক বার্তা দিয়েছিলেন।’’
ওড়াকান্দিতেই জন্ম মতুয়া ধর্মমতের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের। তাঁর বাণী ও নির্দেশাবলি বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর যে পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের হাত ধরে, তাঁরও জন্মস্থান ওড়াকান্দি। এই গ্রামে একটি মন্দির রয়েছে, যা মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদার তীর্থস্থান। প্রধানমন্ত্রী সেখানে গিয়ে প্রণাম করে এলে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মতুয়া-ভোট টানার সম্ভাবনা বাড়বে বলে মনে করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ওই দিন, ২৭ তারিখই যে পশ্চিমবঙ্গে ভোট শুরু, তা ভালই জানে বাংলাদেশ।
বিষয়টি নিযে আওয়ামি লিগের বিশেষ মাথাব্যথা চোখে পড়ছে না। এমনকি, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মোদীর সফরের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, তাতে শামিল হয়নি বিএনপি-জামাত জোটও। করোনার কারণ দেখিয়ে তারা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের উৎসবেই অনুপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বামেদের কিছু ছাত্র সংগঠন (সংখ্যায় নগণ্য) এবং হেফাজতে ইসলামের মতো ইসলামি সংগঠন কালো পতাকা দেখাচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে কিছু জায়গায় সংঘর্ষও হচ্ছে। গুজরাতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জের টেনে মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহের ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলা করছে বলে খবর।