চা বাগানে গিয়ে নিজেকে চা-ওয়ালা বললেন মোদী

তিনি চা বিক্রি করতেন, সে কথা আর কারও অজানা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তা প্রচারও হয়েছে চারদিকে। কিন্তু চা বাগানের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি যে নিজেকে চা-ওয়ালা বলে সম্বোধন করবেন, তা বোধহয় ভাবেননি কেউ। তাই, তাঁর ওই কথার পরেই হাততালিতে ফেটে পড়ল সভামঞ্চের আশপাশ।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ ও নারায়ণ দে

বীরপাড়া শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫০
Share:

(বাঁ দিকে) আম-আদমির সঙ্গে। গোঁসাইপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। (ডান দিকে) বীরপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভার ভিড় মোবাইলে ধরে রাখছেন সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক ও নারায়ণ দে।

তিনি চা বিক্রি করতেন, সে কথা আর কারও অজানা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তা প্রচারও হয়েছে চারদিকে। কিন্তু চা বাগানের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি যে নিজেকে চা-ওয়ালা বলে সম্বোধন করবেন, তা বোধহয় ভাবেননি কেউ। তাই, তাঁর ওই কথার পরেই হাততালিতে ফেটে পড়ল সভামঞ্চের আশপাশ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ায় সার্কাস ময়দানে বিজেপির ডাকা সভায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই মাঠ ঘেঁষেই বীরপাড়া চা বাগান। যে বাগান বন্ধ হয়েছে প্রায় এক বছর হতে চলল। শুধু তাই নয়, বীরপাড়া যে বিধানসভা কেন্দ্রে (মাদারিহাট) পড়ে সেখানে ১১টি চা বাগান বন্ধ হয়ে রয়েছে। মোদী সে খবর ভাল ভাবেই জানতেন। তাই মঞ্চে উঠেই চা শ্রমিকদের মন জয়ের চেষ্টা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি আপনারা চা ওয়ালা। আমিও চা ওয়ালা। আপনারা চা উৎপাদন করেন। আমি ছোটবেলায় চা বিক্রি করতাম। আপনাদের সমস্যার সমাধান করতে চাই। তাই আপনাদের আশীর্বাদ চাই।”

তিনি অভিযোগ করেন, মা-মাটি-মানুষের বদলে পাঁচ বছর পরে চারদিকে মৃত্যু-মৃত্যু-মৃত্যু শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “কিছু ক্ষণ আগেই শুনলাম গতকাল চা বাগানে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সভাস্থল থেকে (বীরপাড়ার সার্কাস ময়দানে সভা হচ্ছিল) দুই কিলোমিটার দূরে। রাজ্য সরকার চা শ্রমিকদের উপেক্ষা করেছে। চা বাগানের নামে সব নিজেদের মিলেমিশে রাজনীতি হয়েছে।” রাজ্য সরকারকে কার্য়ত তুলোধনা করেন প্রধানমন্ত্রী। চা বাগানের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে একজন ওয়েলফেয়ার অফিসার নেই কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর আরও প্রশ্ন, চা বাগান সংক্রান্ত আলাদা দফতর নেই কেন? তিনি বলেন, “আপনারাই বলুন রাজ্যে সরকারের দায়িত্ব আছে কি? একটি চা বাগানের জন্যও সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। আপনাদের কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করছে না। এমন লোককে বাংলায় সরকার গড়ার দায়িত্ব দেবেন?”

Advertisement

তিনি দাবি করেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম কোনও ভারত সরকারের মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের কথা শুনেছেন। বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন। দিল্লি ফিরে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সব জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বন্ধ চা বাগানের মানুষের কত কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছিল, তা শুনেছি। কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমাকে। চা বাগান অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিই।” তাঁর অভিযোগ, তাতেও বাদ সেধেছেন মমদাদিদির সরকার। ওই সরকারের সঙ্গে মালিকদের যোগাযোগ রয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, গরিবদের কাজ বন্ধ হতে দেবেন না। অধিগ্রহণের কাজ তিনি শেষ করেই ছাড়বেন।

সভায় ভিড় দেখে আপ্লুত মোদী বলেন, “চারদিকে যা ভিড় দেখছি, যে উৎসাহ দেখছি, তা দিল্লিতে বসে বোঝার উপায় নেই। গতবার পরিবর্তন পরিবর্তন বলে মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। এই অপশাসনের হিসেব চোকাতে হবে।” তিনি সবার কাছে আবেদন করেন, বাংলাকে বাম ও মমতাদিদির হাত থেকে মুক্তি না দিতে পারলে চা বাগানে উজ্জ্বলতা আসবে না। শ্রমিকদের মজুরি মিলবে না। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এনে উন্নয়নের পথে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ডাক দেন তিনি। রাজ্যের শাসক দল অবশ্য দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় সরকার চা শ্রমিকদের জন্য কিছু করেনি। যার জন্যেই এই অবস্থা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরং চা শ্রমিকদের পাশে সব সময় থেকেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement