ব্রিগেডের মঞ্চে আব্বাস সিদ্দিকি। —নিজস্ব চিত্র
ব্রিগেড সমাবেশের ‘সাফল্য’ গায়ে মেখে ঘরে ফিরলেও, আব্বাস সিদ্দিকি এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএফএস) নিয়ে বিতর্ক তরতাজা বাম কর্মী, সমর্থকদের অন্দরে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে আব্বাসের হাত ধরা একটা ‘ঐতিহাসিক অপরাধ’ হল বলে মনে করছেন দলের একাংশ কর্মী, সমর্থক। তাঁদের প্রশ্ন, দল যখন তৃণমূল এবং বিজেপি-র মতো দু’টি প্রবল শক্তির মুখোমুখি তখন ‘সাম্প্রদায়িকতা’র তাস খেলা আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট গড়া আসলে প্রতিপক্ষের হাতেই অস্ত্র তুলে দেওয়া নয় কি? আইএফএস, বাম এবং কংগ্রেসের জোটের আবহ যত ঘনীভূত হচ্ছে, ততই এমনই সব প্রশ্ন ঘনীভূত হচ্ছে বাম শিবিরের অন্দরে। উঠছে পাল্টা যুক্তির স্রোতও। যে দ্বন্দ্বের কিছুটা আছড়ে পড়ছে নেটমাধ্যমেও।
আব্বাসকে নিয়ে কী কী অভিযোগ ঘোরাফেরা করছে বামমহলের একাংশে? বাম কর্মী, সমর্থকদের একাংশের মত, জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী না করে এক সময় ‘ঐতিহাসিক ভুল’ হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে বাম কর্মীদের একাংশের দাবি, রাজ্য রাজনীতির এমন একটি সন্ধিক্ষণে আব্বাসের হাত ধরা ‘ঐতিহাসিক অপরাধ’। তাঁদের ব্যাখ্যা, আইএফএস ‘সাম্প্রদায়িক’ তাস খেলতে ‘অভ্যস্ত’। তাই এমন দলের সঙ্গে হাত মেলানোর অর্থ বামেদের গায়েও ‘সাম্প্রদায়িকতা’র তকমা লাগা। এ সব নিয়েই পোস্ট এবং মিম ছড়িয়ে পড়েছে নেটমাধ্যমে।
আব্বাসের বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছে বামশিবিরেরই অপর একটি অংশ। ঘটনাচক্রে রবিবার, ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে রাজ্য এবং কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন আব্বাস। ব্রিগেডের মঞ্চ থেকেই আব্বাসের হুঙ্কার, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এখন ঘুম উড়ে গিয়েছে। ২০২১-এ আমরা মমতাকে শূন্য পাইয়ে দেখিয়ে দেব।’’ একইসঙ্গে রবিবারের সমাবেশে দেশ থেকে বিজেপিকে উৎখাতের আহ্বানও জানিয়েছেন আব্বাস। আইএসএফ-এর ওই নেতা যখন মঞ্চ থেকে একের পর এক ঝাঁঝালো মন্তব্য করছেন তখন রীতিমতো গর্জন শুরু করেছে ব্রিগেডের জনতা। যার কিছুটা ঝলক পাওয়া গিয়েছে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম, সিপিএম নেত্রী দেবলীনা হেমব্রমের বক্তব্য চলাকালীন। আব্বাসের প্রতি সমর্থন দেখে তাঁকে ‘ব্রিগেডের হিরো’ হিসাবেও আখ্যা দিয়েছেন ঘরমুখী বাম কর্মী, সমর্থকদের অনেকেই।
বামশিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিগেড সমাবেশের আগের রাতেও অর্থাৎ শনিবার আসনরফা নিয়ে বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আরও এক দফা আলোচনা হয়েছে আইএসএফ-এর। তবে তাতেও জোটের অঙ্ক মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ফের এক বার আলোচনার টেবলে বসার কথা তিন পক্ষের। সূত্রের খবর, বামেরা ইতিমধ্যেই আইএসএফ-কে ৩০টি আসন ছাড়তে রাজি। যার মধ্যে রয়েছে নন্দীগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনও, যেখানে আগেভাগেই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বামেদের প্রস্তাবে বেঁকে বসেছে কংগ্রেস। আইএসএফ-কে যত আসন দেওয়া হবে, তা পুষিয়ে দিতে হবে বলে গোঁ ধরেছে হাতশিবির। আর তাতেই আটকে আসন সমঝোতা।