ফেসবুকে যুযুধান দু’পক্ষই। নিজস্ব চিত্র।
দেওয়াল বনাম ওয়ালের লড়াই।
ইভিএমে কে কত ভোট টানবে, তার হিসেব পেতে অনেক দিন বাকি। কিন্তু সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছতে কোনও কসুর রাখছেন না কাকদ্বীপ মহকুমার বাম কর্মী-সমর্থকেরা। দেওয়াল দখলে খানিক এগিয়ে শুরু করলেও অনলাইন প্রচারে এই মহকুমায় এখনও কয়েক কদম পিছিয়ে শাসক দল।
কাকদ্বীপ মহকুমায় তিনটি বিধানসভা আসন রয়েছে। কাকদ্বীপ, সাগর এবং পাথরপ্রতিমা। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগকে গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তুলে ধরে প্রচার করছে বামেরা। দেখা মিলছে ছড়ার। কোথাও লেখা ‘ঘাসফুল আর পদ্ম/ বাংলা ছাড়বে সদ্য।’’ আবার কোথাও ‘‘জোট বাঁধো/ পাল্টে দাও।’’ সাগর ব্লক টিএমসিপি আবার পাল্টা শেয়ার করেছে, ‘‘বাংলার মাটি/ দুর্জয় ঘাঁটি/ দুর্বৃত্তেরা হুঁশিয়ার/ বাংলার দিদি/ বাঙালির মমতা।’’
কাকদ্বীপের এক সিপিএম নেতা জানালেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে জোট প্রার্থীদের হয়ে প্রচার চালানোর জন্য আলাদা ডিজিটাল দল তৈরি করা হয়েছে। প্রতি দিনের সভা, মিছিলের ছবি তুলে সেগুলি পোস্ট করা হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের ডিজিটাল দলের সদস্য সুমন মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমরা কাকদ্বীপের ছাত্রী ধর্ষণ, নারদা কাণ্ড, সম্প্রতি কাকদ্বীপে টাকা উদ্ধারের মতো ঘটনাগুলিকে আমাদের পেজে দিয়ে দিচ্ছি।’’ তিনি জানালেন, জেলা সিপিএম, ডিওয়াইএফ এবং প্রতিবাদী কাকদ্বীপ এই তিনটি পেজের মাধ্যমেই মূল প্রচার চলছে। এ ছাড়া কর্মী-সমর্থকেরাও নিজেরা নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করছেন।
ফেসবুকের পাশাপাশি হোয়াটস্ অ্যাপেও চলছে প্রচার। এই কাজে কংগ্রেসের তরুণ কর্মীদেরও সঙ্গে পেয়েছে সিপিএম। পাথরপ্রতিমার সিপিএম নেতা শ্যামসুন্দর নায়েকের দাবি, ‘‘ প্রচার, মিছিলের ছবির সঙ্গেই ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে আপলোড করে দিচ্ছি। এই কাজে কংগ্রেসের কর্মীরাও সহযোগিতা করছেন।’’
এ বার কাকদ্বীপের বিজেপি প্রার্থী কৌশিক দাসের বয়স ২৬ বছর। তিনি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রচার সারছেন। তবে কাকদ্বীপ মহকুমার বিজেপি প্রার্থীদের জন্য সংগঠিত ভাবে অনলাইন প্রচার সে ভাবে চোখে পড়েনি। কৌশিকবাবুর কথায়, ‘‘পথে প্রচারে দারুণ সারা পাচ্ছি। আরও কর্মী সঙ্গে পেলে ডিজিট্যাল প্রচারেও জোর আনতে পারব।’’ কাকদ্বীপ মহকুমার অন্য দুই বিজেপি প্রার্থী পাথরপ্রতিমার শ্রীধরচন্দ্র বগরি এবং সাগরের শর্বরী মুখোপাধ্যায়দেরও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
কাকদ্বীপের তৃণমূল প্রার্থীরা অবশ্য অনলাইন প্রচারকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। কাকদ্বীপের তৃণমূল প্রার্থী মন্টুরাম পাখিরার ঘনিষ্ঠ প্রশান্ত শাসমলের কথায়, ‘‘আমাদের ও সবের প্রয়োজন নেই। আমরা চারটি বিষয়ের উপরে দাঁড়িয়ে ভোট করাব। বুথ স্তরের সংগঠন, উন্নয়ন, মন্টুরাম পাখিরার মুখ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি, এই আমাদের সম্পদ।’’
পাথরপ্রতিমার তৃণমূল প্রার্থী সমীর জানা জানালেন, প্রচারে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপকে ব্যবহারের বিষয়ে তাঁরা এখনও কিছু ভাবেননি। তবে তৃণমূলের ছাত্র-যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েকটি পেজ খোলা হয়েছে ফেসবুকে। সাগরের যুব তৃণমূল নেতা সন্দীপ পাত্রের কথায়, ‘‘দিন কয়েক আগে অনলাইনে ভোট প্রচারের জন্যই ফেসবুকে প্রোফাইল খুলেছি। আমাদের আশা, নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের প্রার্থী গ্রহণযোগ্য হবেন।’’ তিনি জানালেন, নিজের প্রোফাইল ব্যবহার করেই স্থানীয় প্রার্থী বঙ্কিম হাজরার হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।
২০১৬ সালে দাঁড়িয়ে বদলে গিয়েছে গ্রামাঞ্চলের ভোটযুদ্ধের চালচলনও।