সাংবাদিক বৈঠকে মহম্মদ সেলিম। বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিনে সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
ভোটের সময়ে চাপের মুখে পড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, নারদ নিউজ পোর্টালের ফুটেজ ‘ভেজাল’! তাঁর ওই তত্ত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে এ বার শাসক দলের উপরে আরও চাপ বাড়াতে চাইল সিপিএম। তাদের ঘোষণা, ভোটের পরে রাজ্যে বিকল্প সরকার এলে নারদ-কাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। শুধু সারদা বা নারদই নয়, টেট-সহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় সুযোগ পাইয়ে দিতে জেলায় জেলায় শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের যে সব অভিযোগ গত পাঁচ বছরে উঠেছে, তদন্তের আওতায় আসবে সে সবও।
তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নারদ-কাণ্ডের তদন্ত তাঁরা চাইছেন না। দলের একাধিক সাংসদের নাম বিষয়টিতে জড়িয়ে যাওয়ায় লোকসভায় এথিক্স কমিটি গঠন করে ঘটনাটি তাদের বিবেচনায় পাঠানো হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব আপাতত ওই কমিটিকে দেখিয়েই ভোটের আগে অন্য তদন্ত এড়াতে চাইছেন। আর ঠিক এই জায়গা থেকেই নতুন করে ভোটের মুখে ‘মোদীভাই-দিদিভাই’ সখ্যের অভিযোগ তুলে সরব হচ্ছে সিপিএম। তাদের অভিযোগ, ভোটের বাজারে বাংলার মানুষকে দেখানোর জন্য সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, দিলীপ ঘোষেরা স্টিং-কাণ্ড নিয়ে হইচই করছেন ঠিকই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কোনও তদন্তের ব্যবস্থা না করে দিদির দলকে স্বস্তির সুযোগ করে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেই সিপিএমের ঘোষণা, ভোটে সরকার বদল হলে এই ‘অন্যায়ের বিচার’ হবে।
সিপিএমের সংসদীয় দলনেতা তথা পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ফুটেজে ছবি এবং আওয়াজ, দু’টোই স্পষ্ট। অথচ মুখ্যমন্ত্রী টিভি দেখেই বলে দিলেন, ফুটেজ ভেজাল! তদন্ত চান না। সংসদে আমরা চেয়েছিলাম অ্যাড-হক কমিটি করে তদন্ত হোক। তাতে রাজ্যসভাও বাদ যেত না। সেটা হল না।
এমনকী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছে স্পষ্ট দাবি জানানো সত্ত্বেও কেন্দ্র কোনও তদন্ত করছে না। কোনও এফআইআর-ও দায়ের করা হয়নি!’’ সেলিমের দাবি, ‘‘এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে, দিদিভাইকে আড়াল করতে চাইছে মোদীভাইয়ের সরকার। অথচ মানুষকে ভুল বোঝানোর জন্য ভোটের সময়ে দু’পক্ষ পরস্পরকে চিত্রনাট্য মেনে আক্রমণ করবে!’’
সেলিমের সুরেই কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় স্তরের আইনজীবী-নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি একই কথা বলেছেন। তাঁরও যুক্তি, ‘‘ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের তদন্তে যৌথ কমিটি গড়ে বহুস্তরীয় তদন্ত চালানোই যায়। লোকসভার এথিক্স কমিটির সঙ্গে এই প্রক্রিয়ার বিরোধ নেই।’’ কিন্তু তেমন তদন্ত যে হচ্ছে না, সেই ঘটনা সামনে এনেই সেলিম বলেছেন, ‘‘বিকল্প সরকার এলে দুর্নীতির তদন্ত হবে। সম্পত্তি বেচে টাকা উদ্ধার হবে। শুধু ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে, তা-ই নয়। দিদির ভাইয়েরা যে ভাবে সম্পত্তি করেছেন, টেট এবং অন্যান্য ব্যাপারে যারা যে ভাবে টাকা নিয়েছেন, সব কিছুর বিচার হবে!’’ এর আগে গত ডিসেম্বরে ব্রিগে়ড সমাবেশ থেকেও সিপিএম নেতারা বলেছিলেন, সরকার বদল হলে সারদা-কাণ্ডের তদন্ত করে অভিযুক্তদের সম্পত্তি নিলাম করে টাকা উদ্ধার হবে। সেই সুরই ভোটের মুখে আরও চড়া করলেন সেলিম।
বামেদের এই আক্রমণের মুখে পাল্টা চাপ দেওয়ারই চেষ্টা করছে তৃণমূল। নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘অভিযুক্ত পক্ষ তদন্ত চাইবে কেন? যারা অভিযোগ করছে, তারাই অভিযোগ প্রমাণ করে দেখাক না!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘ভবিষ্যতে তদন্ত হলে এর সঙ্গে সংখ্যালঘুদের বৃত্তির ফর্ম পুড়িয়ে ফেলা, বিত্ত নিগমের টাকা নয়ছয়-সহ নানা অভিযোগেরও তদন্ত হওয়া দরকার। টেটে গোলমাল বাম জমানাতেই হয়েছিল। সেগুলোও দেখা হোক তা হলে!’’ সেলিম অবশ্য
পাল্টা বলে রেখেছেন, ‘‘গত সাড়ে বছর ধরে নানা অভিযোগে আমাদের জেলে ঢোকানোর হুমকি শুনছি! একটাও কি প্রমাণিত হয়েছে? আর এখন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দলের সব প্রার্থীকে নস্যাৎ করে বলছেন, ২৯৪টা কেন্দ্রে আমাকেই ভোট দিন! তার মানে সব অভিযুক্তকে আড়াল করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীই নিয়েছেন!’’