বারবারই এমন চন্দন কাঠ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। —ফাইল চিত্র।
অন্ধ্রপ্রদেশ পারে, বাংলা পারে না। রক্তচন্দন-সিন্ডিকেট প্রশ্নে এ বার এ ভাবেই শাসককে বিঁধতে শুরু করলেন বিরোধীরা।
রক্তচন্দন কাঠের চোরাই কারবার বন্ধে বিশেষ সেল তৈরি করে অভিযান শুরু করেছে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার। মধ্যে বেশ কিছু সাফল্যও তাঁদের হাতে এসেছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। তাই বিরোধীরা প্রশ্ন, অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার যদি বিশেষ সেল তৈরি করতে পারে তাহলে কেন পশ্চিমবঙ্গের বন দফতর তা করতে পারবে না? তাঁদের কটাক্ষ, এর পিছনে ‘রক্তচন্দন-সিন্ডিকেট’ কাজ করছে বলেই পদক্ষেপ করায় প্রশাসনের এত অনীহা। ওই কারবার থেকে উঠে আসা টাকা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাত ঘুরে পিরামিডের চূড়ায় শাসক দলের নেতাদের কাঠে পৌঁছে যায় বলেই বিশেষ সেল তৈরি আটকে রয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। ওই কারবার থেকেই বছরে অন্তত ৫ কোটি টাকা জায়গা মতো পৌঁছে যায় বলে অনেকেই দাবি করেন।
বন দফতর অবশ্য দাবি করেছে, রক্তচন্দন কাঠ পাচার রুখতে তাদের অভিযানেই সফলতা এসেছে। বন্যপ্রাণী বিভাগের কোচবিহারের ডিএফও ভাস্কর জেবি বলেন, “চন্দন কাঠ নিয়ে আমাদের হাতে কিছু তথ্য ছিল। তা অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে। তারই ভিত্তিতে সেখানে একটি বিশেষ দল গড়ে অভিযান শুরু হয়েছে।” বন দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যে একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রক্তচন্দন কাঠ উদ্ধার করেছে বন দফতর। সে কারণে বন দফতরের উপরে ওই বিষয়ে দোষারোপ করে লাভ নেই। যে দাবি আগেই করেছিলেন তৃণমূল জমানার বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। তিনি বলেন, “ওই সব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা ভাল বলেই আমরা সাফল্য পেয়েছি।” বন দফতর যেভাবে ওই কাঠ উদ্ধারে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তাতে আলাদা সেলের কোনও প্রয়োজন ছিল না বলেন বন আধিকারিকদের একাংশের দাবি। এমন সিন্ডিকেটে অন্তত বন দফতরের কেউ নেই বলেও দাবি করেছেন এক আধিকারিক। না হলে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ রক্তচন্দন ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে, তা হত না বলে তাঁরা পাল্টা দাবি করছেন।
বৃহস্পতিবার বীরপাড়ার সার্কাস ময়দানে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই সভা থেকেই তিনি রক্তচন্দন-সিন্ডিকেটের অভিযোগ তোলেন। যা নিয়ে গোটা রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হয়। গোটা রাজ্যেই যখন সিন্ডিকেট জাঁকিয়ে বসার অভিযোগ উঠছিল, সেই সময় খোদ প্রধানমন্ত্রী ডুয়ার্সে এসে ওই দাবি করায় অস্বস্তিতে পড়ে যান রাজ্যের শাসক দলের নেতারা। তৃণমূলেরই কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারি ওই কারবারের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। উইলসন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি যে কোনও তদন্তের জন্যও প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ কোনও তথ্য না থাকলে তিনি রক্তচন্দনের সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলবেন তা মানতে চাইছেন না অনেকেই।
কীভাবে চলছে এই ব্যবসা? উঠছেই বা কত টাকা? ওই টাকা হাত বদল হচ্ছে কীভাবে? প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরেই তা নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে গোটা আলিপুরদুয়ার। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভুটান, তিব্বত এমনকি চিনেও রক্তচন্দন কাঠের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ওই কাঠ দেশ বদল হতেও কয়েকগুণ বেশি টাকায় বিক্রি হয়। ঠিকঠাক এক ট্রাক রক্তচন্দন বিদেশে পাঠাতে পারলেই ঘরে ঢোকে অন্তত ২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অন্তত এক কোটি টাকা সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায়। মাসে অন্ততপক্ষে একবার ওই কাঠ বাইরে পাঠাতে পারলেই কোটি কোটি টাকার হাতছানি। আলিপুরদুয়ার জেলায় একটি বড় চক্র ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ডুয়ার্সে কোথায় ওই কাঠ মজুত করা হবে, কখন কীভাবে তা সীমান্ত পার করা হবে, সবই হয় ছক কষে। ওই কাজেই সাহায্য পড়ে সিন্ডিকেটের। হাত ঘুরে টাকা তখন চলে যায় নেতা-বিধায়কদের হাতে। তা থেকে আরও বড় জায়গায়। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই কাঠ ঢুকে যায় ভুটানে। ডুয়ার্সের কিছু নেতা ও তাঁদের ছায়াসঙ্গীরা ওই টাকা পেয়ে ইতিমধ্যেই ফুলেফেঁপে উঠেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। শাসক দল অবশ্য দাবি করেছে, তাঁদের কেউ ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নেই।