কাজল সিংহের মৃত্যুর পর নিজের অভিযোগপত্রে কমিশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী নন্দিতা সিংহ। গ্রাফিক: নিরুপম পাল।
খড়দহ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহের মৃত্যুতে নিবার্চন কমিশনকেই দায়ী করলেন তাঁর স্ত্রী নন্দিতা সিংহ। মঙ্গলবার কমিশনের বিরুদ্ধে খড়দহ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন নন্দিতা। ৩ পাতার দীর্ঘ ওই অভিযোগপত্রে তাঁর দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে কমিশনের গাফিলতিতে কাজলের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের ৮ দফার ভোটের ইচ্ছাকৃত ভাবেই করোনা সংক্রমণ রোখার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার খড়দহ কেন্দ্রে ভোট হয়েছে গত বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল। ওই কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের বদলে এ বার প্রার্থী করা হয়েছিল কাজলকে। তবে আগে থেকে করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। ভোটের দিনও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল কাজলের। এর পর ২৫ এপ্রিল মারা যান তিনি। এর দু’দিন পরেই অভিযোগপত্রে কমিশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নন্দিতা। তিনি লিখেছেন, ‘অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে নির্বাচন কমিশনের গাফিলতির জন্যই আমার স্বামীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে’।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে এ রাজ্যে ৮ দফায় ভোট করানোর কথা ঘোষণা করার পর থেকেই কমিশনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিল তৃণমূল। এ নিয়ে একই রকম সরব হয়েছেন নন্দিতা। তামিলনাড়ু, কেরল এবং পুদুচেরিতে ১ এবং অসমে ৩ দফায় ভোট করানো হলেও কেন করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় এ রাজ্যের ভোট ৮ দফা— সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তাঁর মতে, করোনা সংক্রমণের জেরে গোটা দেশের মতো এ রাজ্যও যখন জেরবার, সে সময় কোন যুক্তিতে ৮ দফায় ভোট করানো হচ্ছে।
নন্দিতা জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে ১৬ এপ্রিল কমিশনের কাছে চিঠি লিখেছিলেন কাজল। তৃণমূল নেতৃত্ব থেকেও ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম দফার ভোট একসঙ্গে করানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে সে সবই অগ্রাহ্য করেছে কমিশন। তাঁর দাবি, করোনার আবহে নির্বাচনী জনসভায় এক জন প্রার্থীর পক্ষে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও কোভিডের সংক্রমণ এড়ানোর জন্য কোনও ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে কমিশন। নন্দিতার মতে, কোভিড থেকে প্রার্থীকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ কমিশনই তাঁর স্বামীর মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী।
প্রসঙ্গত, কাজলের আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে ৩ প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। সামশেরগঞ্জের সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হক ওরফে মন্টু বিশ্বাসের মৃত্যুর পর দিনই মারা যান জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের আরএসপি প্রার্থী প্রদীপ নন্দী। এর পর মালদহের বৈষ্ণবনগর কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী সমীর ঘোষও করোনা সংক্রমণে মারা গিয়েছিলেন।