—ফাইল চিত্র।
আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ (ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট)-এর সঙ্গে সিপিএমের নির্বাচনী বোঝাপড়ায় দলের পলিটব্যুরো আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দিল। আইএসএফের সঙ্গে জোট করতে গিয়ে সিপিএম ‘মৌলবাদী’ বা ‘সাম্প্রদায়িক’ শক্তির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে কি না, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যেও প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, এতে ধর্মনিরপেক্ষ ভোট বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে কি না? কিন্তু সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব বৃহস্পতিবার পলিটবুরোয় ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আইএসএফ সাম্প্রদায়িক শক্তি নয়। আদিবাসী, দলিত, পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন শ্রেণির মঞ্চ। বস্তুত, বাংলায় সংযুক্ত মোর্চার যে প্রার্থী তালিকা ঘোষিত হয়েছে, তার মধ্যে আইএসএফের সংখ্যালঘু মুখের পাশাপাশি তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং সাধারণ আসনে বর্ণহিন্দু প্রার্থীও আছেন। বিষয়টিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত নয়। বরং, সেটা করলে বিজেপির উদ্দেশ্যই পূরণ হয়।
সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের মতে, বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের ফলে বাংলার ভোটে ত্রিমুখী লড়াই হবে। তাঁদের দাবি, আইএসএফ তরুণ বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, গত ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ দলের সঙ্গে বোঝাপড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। শর্ত ছিল, যারা বিজেপি এবং তৃণমূলকে হারাতে চায়, তাদের সঙ্গেই বোঝাপড়া হবে। তখনও আইএসএফের সঙ্গে হাত মেলানোর প্রশ্ন সামনে আসেনি। এ বার সেই প্রশ্নেরই ফয়সালা হল।
আইএসএফ বামেদের সঙ্গে হাত মেলানোয় তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরলে আখেরে বিজেপির সুবিধা হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। সিপিএম সূত্রের দাবি, অন্যান্য রাজ্যে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির এমআইএম ধর্মীয় মেরুকরণ করে বিজেপির সুবিধা করে দেয়। কিন্তু বাংলায় আইএসএফের সঙ্গে কংগ্রেস, বামেদের বোঝাপড়ার ফলে পশ্চিমবঙ্গে এমআইএম তেমন সক্রিয় হতে পারছে না। পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে সিপিএমের প্রধান লক্ষ্য হবে বিজেপিকে হারানো। কারণ, তা রাজ্যের মানুষের কল্যাণের জন্য জরুরি। দেশের ঐক্য ও সংহতির জন্যও প্রয়োজন।
বাংলায় যে আসনগুলিতে প্রার্থী দেওয়ার নিষ্পত্তি হয়নি, তা নিয়ে সংযুক্ত মোর্চার শরিকদের মধ্যে এখনও আলোচনা চলছে। তৃতীয় ও চতুর্থ দফার ভোটে দলের আসনগুলির জন্য প্রার্থী তালিকা শীঘ্রই ঘোষণা করবে এআইসিসি। এক একটি এলাকায় লাগোয়া কয়েকটি আসন বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে যে ভাবে ভাগ করার কথা ছিল, বাম তালিকা ঘোষণার প্রেক্ষিতে তা খানিকটা এলোমেলো হয়েছে বলে কংগ্রেসের বক্তব্য। নিষ্পত্তির জন্য আলোচনা চালাচ্ছেন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব।