জোনাল অফিসের সামনে পতাকা তুলছেন হিমাংশু দাস। ছবি:সোহম গুহ
আধা সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি এ দিন ভরসা জোগাচ্ছিল। আট বছর পর ভোটের মুখে খেজুরিতে উঠল লাল পতাকা, খুলল সিপিএমের পার্টি অফিস।
শুক্রবার দুপুরে হেঁড়িয়ায় জোনাল অফিসের সামনে দলীয় পতাকা তুললেন জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাস। দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি মনে করিয়ে দেন, “২০০৯ সালে খেজুরির বুকে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী হুঙ্কার ছেড়েছিলেন বিরোধীদের ‘লাল ন্যাকড়া’ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার। তিনি তা পারেননি, পারবেনও না।’’
বামেদের অভিযোগ, রাজনৈতিক পালা পরিবর্তনের আবহে ২০০৯ সালের ৮জুন সিপিএমের হেঁড়িয়া জোনাল অফিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। শুধু হেঁড়িয়া নয়। একের পর এক ভাঙচুর, লুঠতরাজ আর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সে সময় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন নেতারাও। খেজুরিতে সিপিএমের দু’টি জোনাল, সাতটি লোকাল ও ৭৫টি শাখা কার্যালয় একের পর এক বন্ধ হয়ে যায়। নেতৃত্বের দাবি, বহু সিপিএম নেতা কর্মী ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন শাসক-দুষ্কৃতীদের অত্যাচারে। এখনও খেজুরির ২৪০ জন সিপিএম কর্মী ঘরছাড়া।
হেঁড়িয়া জোনাল অফিস উদ্বোধন করে হিমাংশুবাবু বলেন, “শাসক দলের অত্যাচারের বন্ধ হয়ে থাকা সমস্ত পার্টি অফিস খোলা হবে এবং ঘরছাড়াদের ভোটের আগে ঘরে ফেরাতে হবে বলে ইতিমধ্যেই নিবার্চন কমিশন নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ অনুসারেই প্রশাসনের উপস্থিতিতে নতুন করে কার্যালয় খোলা হল। এরপর খেজুরির বাকি পার্টি অফিসগুলিও খোলা হবে।” তাঁর আশ্বাস, দীর্ঘদিন ঘরছাড়া বামকর্মীদেরও ঘরে ফেরানোরও ব্যবস্থা করা হবে।
এ দিন সকালে প্রায় খণ্ডহর হেঁড়িয়া পার্টি অফিস নতুন করে উদ্বোধনের হল। সেখানেই কাজ শুরু করেন খেজুরি-১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি হিমাংশু দাস, খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দীপালি মণ্ডল, প্রশান্ত মাইতি, প্রজাপতি দাস, সুকদেব জানা, ভরত মাইতির মত ঘরছাড়া সিপিএম নেতা ও কর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন খেজুরির বিরোধী জোটের প্রার্থী অসীম মণ্ডলও।
দলের নিজস্ব কার্যালয়ের দরজা ও গ্রিল বহুদিন আগেই লুঠ হয়ে গিয়েছে। সেই হা-ঘরের ছাদেই নতুন করে সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। সামনে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী শহিদ-বেদি। লাল পতাকা উত্তোলন করে নেতারা হিসাব দিতে ভোলেননি— ২০১১ সালের বিধানসভা নিবার্চনে তৃণমূলের সন্ত্রাসের মধ্যেও বামফ্রন্ট প্রার্থী ৭১ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। তৃণমূল জিতেছিল মাত্র ১৬হাজার ভোটে। সন্ত্রাসের আবহে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই দেয়নি তৃণমূল। হিমাংশুবাবুর কটাক্ষ, “যারা খেজুরির বুক থেকে সিপিএম বা বামফ্রন্টকে নিশ্চিহ্ন করার স্বপ্ন দেখেন তারা মূর্খের স্বর্গে
বাস করছেন।”
একই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, তৃণমূল বিভিন্ন ক্লাবের অল্পবয়সী ছেলেদের হাতে রঙিন জলের বোতল তুলে দিয়ে আর সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করে নিজেদের রাজত্ব বজায় রাখতে চাইছে। সাধারণ মানুষ প্রকাশ্য প্রতিবাদের সাহসটুকুও হারাচ্ছেন। এ দিনের অনুষ্ঠানেই নেতৃত্ব খেজুরি বিধানসভা কেন্দ্রে বিরোধী জোটের প্রার্থী অসীম মণ্ডলকে নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ জোট হিসেবে সিপিএম ও কংগ্রেস লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন।