কার্জন গেটে সিপিএমের সভা। —উদিত সিংহ।
রাত পোহালেই শুরু হবে বুথের লাইন। তার আগে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে বর্ধমানে ভোটের তাপ বাড়িয়ে দিল সিপিএম।
মার খেলে গণপ্রতিরোধ তো করতেই হবে, এমনকী শাসকদল ভোট লুঠ করতে এলে ঝাঁটা নিয়ে তাড়া করতে হবে—মহিলাদের উদ্দেশে এই আহ্বান জানালেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক। মঙ্গলবার রাতে বর্ধমান দক্ষিণের সিপিএম প্রার্থী আইনুল হকের প্রচারে তৃণমূলের ‘হামলার’ প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে কার্জন গেটের মোড়ে সিপিএম সভা করে। সেই সভায় অচিন্ত্যবাবু-সহ জেলা সিপিএমের নেতারা আগাগোড়া তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান শহরে রোড-শো করেন। ওই রাতেই শহরের সাহচেতন এলাকায় সিপিএমের প্রচার চলছিল। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রা শেষ হওয়ার পরে তৃণমূলের ৫০-৬০ জন রাস্তা আটকে প্রচারের গাড়ি ভাঙচুর করে। আটকাতে গিয়ে সিপিএমের পাঁচ জন মারধরে জখম হন। পাল্টা মারে তৃণমূলের দু’জন আহত হন। দু’দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনার পরেই পুলিশ টোটন শেখ, রফিক শেখ ও হারু সরকার নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতেরা এলাকায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। এ দিন তাঁদের আদালতে তোলা হলে জামিন মঞ্জুর হয়। হামলার সময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলে আইনুল হক মঙ্গলবারই অভিযোগ করেছিলেন। এ দিন কার্জন গেটের সভা থেকে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অমল হালদার পুলিশকে উদ্দেশ করে হুঁশিয়ারি দেন, “আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন!”
যে প্রশ্নটা শহরের অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, শহরের রাজপথ দিদি ছাড়ার পরেই সিপিএমের উপর এই হামলা হল কেন?
পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, যে রাস্তা দিয়ে সিপিএমের প্রচারের গাড়ি যাচ্ছিল, সেই রাস্তার উপরে ঝুলছিল তৃণমূলের পতাকা। সেই পতাকা সিপিএমের কর্মীরা হাত দিয়ে সরাতেই বচসা শুরু হয়ে। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “ওই বচসার সময় সিপিএম রুখে দাঁড়াতেই তৃণমূলের লোকেরা গাড়ি ভাঙচুর করতে শুরু দেয়।” তৃণমূল নেতাদের একাংশ আবার জানাচ্ছেন, শহরে সিপিএমের দাপট বাড়ছে। গত ক’দিনে জোটের মিছিলে ভিড় হয়েছে চোখে পড়ার মতো। যে কোনও ঘটনাতেই সিপিএম রুখে দাঁড়াচ্ছে। এবং এই ‘রুখে’ দাঁড়ানো শাসকদলের পক্ষে খুব ভাল ‘লক্ষণ’ নয়। সে জন্যই মঙ্গলবার সামান্য ঘটনা থেকেও সিপিএমের উপরে হামলা হয়। দলের প্রার্থীও হেনস্থার মুখে পড়েন। সিপিএম নেতা অমলবাবুরও দাবি, “প্রতিদিন আমাদের মিছিলে মানুষের সমর্থন বাড়ছে। সেই দেখে তৃণমূল ভয় পেয়ে হামলা করছে।”
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘সিপিএমও অশান্তি করার জন্য প্ররোচনা তৈরি করছে। ওই ফাঁদে পা দিলেই তারা কমিশনের কাছে নালিশ করবে, ‘আমরা আক্রান্ত’ বলে। শহরের অনেক নেতাই নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর জন্য সিপিএমের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন।”
এ দিন বিকেলে কার্জন গেটের সভায় অচিন্ত্যবাবু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমরা আর মার খেয়ে বাড়ি ফিরব না। প্রতিরোধ হবেই।” তার পরেই মহিলাদের উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, “আঁচলের নীচে মুড়ো ঝাঁটা নিয়ে বুথে যান। ভোট লুঠ হচ্ছে দেখলে ওই ঝাঁটা দিয়ে লুঠেরার দলকে পেটাতে থাকুন!” একই সুরে অমলবাবু বলেন, “ভোট দিতে বাধা দিলেই প্রতিরোধ করতে হবে।” কার্জন গেটে সভা চলার সময় সিপিএম সমর্থিত বিশিষ্ট জনদের একটি দল জেলাশাসকের কাছে ভোটের দিন ‘নিরাপত্তা’র দাবি করেন। ওই দলে থাকা দেবেশ ঠাকুর, অংশুমান কর বলেন, “পুরভোটের দিন যে সন্ত্রাস দেখা গিয়েছিল, তাতে অনেকে ভোট দিতে পারেননি, অনেকে ভয়ে রাস্তায় নামেননি। সে জন্য আমাদের মতো সাধারণ ভোটারদের নিরাপত্তার দাবি করা হয়েছে জেলাশাসকের কাছে।”
বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন তাঁদের আশ্বস্ত করে জানান, সবাই নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন সে রকমই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের দাবি, “সিপিএমের হাতে আমরাই আক্রান্ত হচ্ছি। আবার পুলিশ আমাদেরকেই গ্রেফতার করছে। আসলে সিপিএম মুখে সন্ত্রাস বলছে, আবার কাজেও সন্ত্রাস তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।”