মঙ্গলকোটে জখম তৃণমূল সমর্থকেরা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এলাকাবাসী তাদের পক্ষে ভোট দেয়নি, এমন আঁচ করে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুরে নলকূপে শিকল জড়িয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। আর বর্ধমানের মঙ্গলকোটে সিপিএমের মিছিলে পা মেলানোয় কিছু বাসিন্দাকে পানীয় জল নিতে দেওয়া যাবে না বলে ফতোয়া দিয়েছিল তৃণমূল। সিপিএমের দাবি, সে অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ায় শুক্রবার হল হামলা। বারো জন আহত হন। অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার অভিযোগে সরব শাসক দল।
দু’পক্ষই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, গ্রামে টহল চলছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনাস্থল আঁতকুল গ্রাম। ২০০৯ সালের ১৫ জুন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় খুনের পরে মঙ্গলকোটের যে কটি গ্রামে অশান্তি ছড়ায় তার অন্যতম এই আঁতকুল। সিপিএমের দাবি, দিনকয়েক আগেই ওই গ্রামের সুশান্ত মাঝি মঙ্গলকোটের বিডিও তথা অতিরিক্ত নির্বাচন আধিকারিক সায়ন দাশগুপ্তের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন— ২৮ মার্চ এলাকায় দলের মিছিলে হাঁটার ‘অপরাধে’ রাতেই তাঁদের জল নিতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। তবু সজলধারা প্রকল্পের জল আনতে গিয়েছিলেন গ্রামের একশো ঘর বাসিন্দার মধ্যে চল্লিশ ঘর সিপিএম সমর্থক পরিবারের মহিলারা।
সুখলা মাঝি, বোধন মাঝি, কুড়ো মাঝিদের অভিযোগ, ‘৩৪ বছরে সিপিএম কিছু করেনি। তাই তৃণমূলের আনা জল তোদের দেওয়া হবে না’— বলে ফতোয়া দেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। বেশ কয়েকদিন এ পরিস্থিতি চলে। বেপাড়ার নলকূপ থেকে জল এনে চালাচ্ছিলেন তাঁরা। বিডিও অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘দিন কয়েক আগে পুলিশ ও প্রশাসন গ্রামে গিয়ে পানীয় জল নেওয়া থেকে কাউকে বঞ্চিত করা হচ্ছে— এমনটা পায়নি। তবে এলাকাটি নজরে রাখা হয়েছে।’’
প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর আক্রোশেই তৃণমূলের লোকেরা এ দিন হামলা চালায় বলে অভিযোগ সিপিএমের। বামেদের দাবি, সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ লাঠি, টাঙ্গি নিয়ে তাদের সমর্থক পরিবারগুলির উপরে হামলা চালানো হয়। বারো জন আহতকে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
হামলায় জখম বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধা নিয়তি মাঝি বলেন, “ভোটের কর্তাদের জানানোটাই কাল হল! জল তো দিলই না, উল্টে মারল। আমি তো পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের অভিযোগ, “আমাদের রাজ্যে জল নিয়েও রাজনীতি করছে তৃণমূল!’’
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল শিবির। দলের ওই এলাকার পর্যবেক্ষক, বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, “সিপিএম ডাহা মিথ্যা বলছে। ওরা যত শক্তি হারাচ্ছে, তত অশান্তি করতে চাইছে।’’