দুই শহরে জোট জমাট অধীরের সভায়

হাত-হাতুড়ির সঙ্গে হাজির সিংহ

এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখেনি বাঁকুড়া ! বাঁকুড়ার বঙ্গ বিদ্যালয়ের মাঠে মঞ্চের সামনের ঠাসা ভিড়ে কারও হাতে লাল ঝান্ডা, কারও হাতে হাত চিহ্নের পতাকা। সেই ভিড় ঠেলে মঞ্চ পর্যন্ত আসতে গিয়েই ঘেমে নেয়ে একশা হলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০২:০৮
Share:

জোটের মিছিলে বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা পাশাপাশি বিষ্ণুপুরে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখেনি বাঁকুড়া!

Advertisement

বাঁকুড়ার বঙ্গ বিদ্যালয়ের মাঠে মঞ্চের সামনের ঠাসা ভিড়ে কারও হাতে লাল ঝান্ডা, কারও হাতে হাত চিহ্নের পতাকা। সেই ভিড় ঠেলে মঞ্চ পর্যন্ত আসতে গিয়েই ঘেমে নেয়ে একশা হলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বাম-কংগ্রেস, দুই দলের কর্মী-সমর্থকেরাই তাঁকে একবার ছোঁওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন! মঞ্চে উঠেই এক মুখ হাসি নিয়ে অধীরবাবু করমর্দন করলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রতীপ মুখোপাধ্যায়, জেলা কমিটির সদস্য সুবিকাশ চৌধুরী-সহ অন্য বাম দলের নেতাদের সঙ্গে।

হাততালির গমগমে আওয়াজ জানান দিল, জোট জমজমাট!

Advertisement

এমন দিনও তো কখনও আসেনি যে, বামেদের মঞ্চে প্রধান বক্তা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি! মাঠের ভিড় থেকে কখনও ভেসে আসছে ‘বন্দে মাতরম’। কখনও স্লোগান উঠছে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। দৃশ্যই অভিভূত অধীর মাইক ধরেই বলে উঠলেন, “যে উৎসাহ নিয়ে বাম কর্মীরা আমাদের প্রার্থীর হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তার জন্য আমি বামফ্রন্ট কর্মীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’’ অধীরবাবুর কথা শেষ হওয়ার আগেই ফের যৌথ স্লোগানে জোটের গর্জন আরও তীব্র হয়ে উঠল। অধীর বলে চললেন, ‘‘এমন সভা আমি আগে করিনি। যেখানে কংগ্রেসের ফ্ল্যাগ, সেখানে সিপিএম পার্টিরও ফ্ল্যাগ। সেখানে আবার সিংহ (ফব-র দলীয় পতাকা) দাঁড়িয়ে আছে। একে রামে রক্ষে নেই, সঙ্গে সুগ্রীব দোসর। এসে গেছে সিংহও! কোথায় যাবে তৃণমূল? হাত-হাতুড়ি সঙ্গে সিংহ, তৃণমূল এ বার তোমাকে বাংলা ছাড়তে হবে।’’

এমনিতেই এ বার তৃণমূল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত প্রাক্তন পুরপ্রধান শম্পা দরিপাকে বাঁকুড়া কেন্দ্রে জোট প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। ফলে, এই কেন্দ্রের ভোটও অন্য এক মাত্রা পেয়েছে। শহরের মানুষও বলছেন, ভোটের ফল যাই হোক, শম্পাদেবীকে নিয়ে যে উৎসাহের সঙ্গে প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন জোটের কর্মীরা, তা দীর্ঘদিন দেখা যায়নি। অনেকেই বলছেন, গত লোকসভা ভোটের আগে দলীয় প্রার্থীর হয়ে এই বঙ্গ বিদ্যালয়ের মাঠেই সভা করতে এসেছিলেন অধীর। তখন মাঠের এক তৃতীয়াংশও ভরেনি। আর এ দিন পুরো উল্টো ছবি।

সিপিএম নেতা সুবিকাশবাবু, জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সুরে দাবি, আট থেকে দশ হাজার লোক হয়েছে। জমায়েতের চেহারা দেখে অধীর দাবি করে ফেললেন, ‘‘শম্পাদেবী যে জিতছেন, তা এই সভাই নিশ্চিত করে দিয়েছে।’’ সভায় হাজির প্রবীণ সিপিএম কর্মী চণ্ডীদাস মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “রেকর্ড ভিড় হবে আশা করেছিলাম। হয়েওছে।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, দশ না হলেও লোকের সংখ্যাটা হাজার পাঁচ-ছয়েক তো হবেই। তৃণমূলের ভরা বাজারে তাই-ই বা কম কী!


বাঁকুড়ার সভামঞ্চে শম্পা দরিপার সঙ্গে অধীর চৌধুরী। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

ভিড়ে ঠাসা সভায় রসিকতার ঢঙে অধীরবাবু যখন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্রমাগত বিঁধছেন, সভা দেখতে আসা বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা ততই কখনও উল্লাসে চিৎকার করে উঠেছেন, কখনও করতালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁকে। অন্য দিকে মঞ্চে উপস্থিত সিপিএম নেতা প্রতীপবাবু, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনাথ মল্ল, আরএসপি-র জেলা সম্পাদক গঙ্গা গোস্বামীদেরও মুখ টিপে হাসতে দেখা গিয়েছে। কখনও সারদা-নারদা, কখনও টেট কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে অধীরকে। আবার জোটের প্রয়োজনীয়তাও ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, “যখন বন্যা আসে, তখন প্রাণ বাঁচাতে গরু-ছাগল-মানুষ সব এক জায়গায় আশ্রয় নেয়। আমরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রাস থেকে বাঁচতে ও রাজ্যকে রক্ষা করতেই এক জোট হয়েছি।’’ এর পরেই মমতার প্রতি তাঁর কটাক্ষ, “আগে দিদি এই জোটকে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না, ঘোঁট বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এখন দিন যত যাচ্ছে, মমতার চুল তত খাড়া হয়ে যাচ্ছে।’’

বাঁকুড়ায় আসার আগে বিষ্ণুপুরে কংগ্রেসের জোট প্রার্থী তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের সমর্থনে সোনামুখী মোড় এলাকায় একটি সভা করেন অধীর। তার পর শহরে প্রার্থীকে নিয়ে মিছিল করেন তিনি।

বিষ্ণুপুরের সভাতেও জোট ঐক্য ছিল চোখে পড়ার মত। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন দুই বাম বিধায়ক স্বপন ঘোষ, জয়ন্ত চৌধুরী, তালড্যাংরার বিদায়ী সিপিএম বিধায়ক মনরঞ্জন পাত্র, জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলমাধব গুপ্ত-সহ অনেকে। ওই সভায় যখনই সারদা-কাণ্ড থেকে টেট, সিভিক ভলান্টিয়ার কিংবা আইসিডিএসের মতো বিভিন্ন চাকরির নিয়োগে দুর্নীতির সঙ্গে বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে কটাক্ষ করেছেন অধীর, তখনই হাততালিতে ফেটে পড়েছেন হাজির বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা। অধীর বলেন, “নেহাত বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশ হওয়ায় সারদা তদন্ত হাল্কা করে ফেলল সিবিআই। না হলে সারদাকে সিমেন্ট কারখানা বিক্রি করে এখন জেলে থাকতেন শ্যামবাবু!’’

সভা শেষে বিষ্ণুপুরে জোটের বড়সড় মিছিল হয়। হাজার তিনেক মানুষের মিছিলে শহরে যানজটও হয়। জোটকে অবশ্য মুখে এতটুকুও গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। অধীরের মন্তব্য ধরেই জেলা তৃণমূল নেতা তথা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “গরু-ছাগলেরও তো একটা ওয়েট থাকে। ওঁদের কোনও ওয়েটই নেই! আমাদের উন্নয়নের জোয়ারে খড়কুটোর মত ভেসে যাবেন জোটের প্রার্থীরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement