বুথেই বসে রইল কেন্দ্রীয় বাহিনী, ভরসা দেবে কে

প্রত্যন্ত গ্রামের ভোটারেরাও যাতে নির্ভয়ে বুথে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, এ বার কমিশন নিশ্চিত করবে সেটাই— দিল্লিতে বসে এমনই আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। এলাকায় টহল দিয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করতেই ১ মার্চ থেকে কমিশন রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়েছে, ছিল এ দাবিও। কিন্তু বিধানসভা ভোটের ঠিক আগের দিন, রবিবার সকাল থেকে জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা গেল, টহলদারি থেকে প্রায় উধাও কেন্দ্রীয় বাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৩৩
Share:

টহল সেই বুথ চত্বরে। বাঁকুড়ার ফুলকুসমায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

প্রত্যন্ত গ্রামের ভোটারেরাও যাতে নির্ভয়ে বুথে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, এ বার কমিশন নিশ্চিত করবে সেটাই— দিল্লিতে বসে এমনই আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। এলাকায় টহল দিয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করতেই ১ মার্চ থেকে কমিশন রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়েছে, ছিল এ দাবিও। কিন্তু বিধানসভা ভোটের ঠিক আগের দিন, রবিবার সকাল থেকে জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা গেল, টহলদারি থেকে প্রায় উধাও কেন্দ্রীয় বাহিনী।

Advertisement

অথচ, ভোটের আগের দিন এবং রাতটা কতটা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সেটা গ্রামবাংলার মানুষ বিলক্ষণ জানেন। এই সময়েই ভোটারদের হুমকি দিয়ে বেড়ায় শাসক দলের দুষ্কৃতীবাহিনী। বলা হয়, ‘আমাদের ভোট না দিলে ফল খারাপ হবে’। আবার ভোটারদের লোভ দেখাতে অনেক জায়গায় বিলি হয় টাকা। কোথাও কোথাও ভোটারদের হাতে পৌঁছে যায় মদের বোতল, পরের দিন কোন বোতাম টিপতে হবে তার নির্দেশ-সহ।

গত ৩৯ বছরের এমন ঐতিহ্যই এ বার ভাঙার আশ্বাস দিয়েছিলেন নসীম জৈদী। জানিয়েছিলেন, বুথের দায়িত্বে যেমন শুধুই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে, তেমনি টহলদারির কাজে রাজ্য পুলিশ থাকলেও নেতৃত্ব দেবে কেন্দ্রীয় বাহিনীই। যা শুনে আশ্বস্ত হয়েছিলেন বিরোধীরা। কারণ, গত লোকসভা ভোটের অভিজ্ঞতাও বলছে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও গ্রামের রাস্তায় রাজ্য পুলিশের টহলদারি থাকার ফলে ভোটারদের যথেচ্ছ সন্ত্রস্ত করতে পেরেছিল শাসক দল। এ বার জৈদীর আশ্বাস সত্ত্বেও বস্তুত সেই ছবিরই পুনরাবৃত্তি দেখা গেল রবিবার। এ দিন জঙ্গলমহলের তিন জেলার একাধিক বিধানসভায় মূলত বুথ আর ভোট-কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার কাজেই ব্যস্ত রইল কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর গ্রামের ভিতরে পাহারা, নজরদারি, গাড়ি তল্লাশির মতো কাজে মোতায়েন করা হল রাজ্য পুলিশকে।

Advertisement

এ দিন রাইপুর ও রানিবাঁধ কেন্দ্রে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার চক্কর কেটে এক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি ছাড়া (তা-ও রাজ্য পুলিশের) আর কোনও টহলদারি বা পাহারা চোখে পড়েনি। পশ্চিম মেদিনীপুরে নয়াগ্রামের ধুমসাইতে দেখা গেল, পশ্চিম মেদিনীপুরের সঙ্গে ওড়িশার সীমানা এলাকা অরক্ষিত। কাঁকড়াঝোরের ঘাটশিলা মোড়ে নাকায় গাড়ি পরীক্ষা করার পরে রাজ্য পুলিশের জনা দুই কর্মী সংবাদপত্রের নাম জেনে বললেন, ‘‘আপনারা বড্ড বেশি একপেশে খবর করেন। সাবধানে যান।”

এই অবস্থা কেন? পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, ‘‘কমিশনের নির্দেশমতো ভোটের আগের দিন ভোটকর্মীদের বুথে নিয়ে যাওয়া এবং ভোটের দিন বুথ ও বুথ চত্বরের নিরাপত্তা পুরোপুরি কেন্দ্রীয় বাহিনীর অধীনে থাকবে। এর বাইরে গোটাটাই দেখভাল করবে রাজ্য পুলিশ।’’ আর বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বা পুরুলিয়ার তন্ময় চক্রবর্তীরা বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী আগে তো বুথে যাবে। পরে বেরোবে টহলে।’’ খাতড়া মহকুমায় ভোট-পাহারায় আসা বিএসএফের এক কর্তা বললেন, ‘‘টহলদারি দলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অস্তিত্ব নামমাত্র। এমনকী, বহু দলে বাহিনীর জওয়ানেরা নেই।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর বা পুরুলিয়ার জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বুথের নিরাপত্তায় রাখাটা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ।’’

যদিও রাতে দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ–মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা আনন্দবাজারকে বললেন ‘‘এমন কোনও নির্দেশ নেই। এ ব্যাপারে ধোঁয়াশারও কোনও অবকাশ নেই। প্রয়োজনে সব জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আমি নিজে কথা বলব।’’

কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতি নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্তের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। দিল্লিতে অভিযোগ ঠুকেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ‘‘ব্যাপারটা জেনেই কমিশনকে জানিয়েছি,’’ বলেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

বাম ও কংগ্রেস জোটের অবশ্য অভিযোগ, জৈদী যা-ই বলুন মোদী ও দিদির যোগসাজশে কেন্দ্রীয় বাহিনী কার্যত ঠুঁটো হয়ে থাকবে। সূর্যবাবুর কথায়, ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই।’’ তাঁদের আশঙ্কাকে জোরদার করে পুরুলিয়ার এক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক মেনে নেন যে, প্রত্যন্ত গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি না থাকার সুযোগে শাসক দল ভোটারদের মদ খাইয়ে প্রভাবিত করছে, এমন অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। তাঁর অসহায় মন্তব্য, ‘‘কী করব! এমন তো হয়েই থাকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement