পলাশের ভার। বাঘমুণ্ডির কুশলডি ময়দানে। নিজস্ব চিত্র।
‘রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে’। কিন্তু হোটেল মালিকদের মুখ ভার।
লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে বসন্ত সমাগমে পর্যটকদের জন্য তৈরি হয়ে উঠেছিল পুরুলিয়া। সমস্ত ঘরের দোলের সময়ের বুকিং ফেব্রুয়ারিতেই হয়ে গিয়েছিল অধিকাংশ হোটেল-লজে। ২৮ মার্চ দোল। আর তার আগের দিন, ২৭ মার্চ পুরুলিয়ায় ভোট। জেলার হোটেল ও লজ মালিকদের সংগঠনের মুখপাত্র মোহিত লাটা বলেন, ‘‘দোলের সময় টানা চার-পাঁচ দিন জেলার প্রায় সমস্ত পর্যটনস্থলগুলির অতিথিশালার বুকিং সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আগের দিন নির্বাচন পড়ায় এখন অনেকেই বুকিং বতিল করছেন।’’
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই অযোধ্যা পাহাড়, গড় পঞ্চকোট, জয়চণ্ডী, বড়ন্তির মতো পর্যটনস্থলগুলির অতিথিশালায় বুকিং বাতিল করতে শুরু করেছেন অনেক পর্যটক। তাঁদের মূল সংশয়, নির্বাচনের আগের দিন বাইরের জেলা থেকে পুরুলিয়ায় ঢুকতে আর নির্বাচনের দিন পর্যটনস্থলের আশপাশের এলাকায় নির্বিঘ্নে ঘোরাঘুরি করতে পারবে কি না? তবে প্রশাসনের তরফে বুকিং বাতিল করানোর কোনও নির্দেশ জারি হয়নি বলে জানা গিয়েছে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারলে কাউকে নির্বাচনের আগে ঢুকতে বাধা দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন কখনওই চায় না সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হন। কিন্তু নির্বাচনী বিধিও আমাদের মেনে চলতে হবে।’’
করোনা পরস্থিতিতে জোর ধাক্কা লেগেছিল পুরুলিয়ার পর্যটনশিল্পে। দুর্গাপুজো পর্যন্ত কার্যত পর্যটকই হয়নি। শীতে একটু একটু করে ভিড় বাড়া শুরু হয়। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকে জানান, এমন পরিস্থিতিতে দোলের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন তাঁরা। পর্যটনের ভরা মরসুম শেষ হয়ে যায় দোলের পরে গরম বাড়তে শুরু করলে। অযোধ্যা পাহাড়ের একটি অতিথিশালার কর্মকর্তা পুরুলিয়ার হোটেল ও লজ মালিকদের সংগঠনের মুখপাত্র মোহিত লাটা। তিনি বলেন, ‘‘অনেক আগেই সমস্ত ঘরের দোলের সময়ের বুকিং হয়ে গিয়েছিল। অযোধ্যায় জায়গা দিতে না পেরে অনেককে আমাদের পুরুলিয়ার হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু ভোট পড়ে যাওয়ায় অনেকে এখন বুকিং বাতিল করছেন।”
গড় পঞ্চকোটের একটি অতিথিশালার কর্মকর্তা সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘এ বার দোল পড়েছে সপ্তাহান্তে। ফলে অনেক আগেই অতিথিশালার সমস্ত ঘর বুক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন ঘোষণার পরে বুকিং বাতিল হতে শুরু হয়েছে।” গড়পঞ্চকোটের আর একটি অতিথিশালার ম্যানেজার অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সংশয়ে থাকা পর্যটকদের বুকিং বাতিল না করে দোলের পরে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। ২৬ থেকে ২৯ মার্চ অযোধ্যা, গড়পঞ্চকোট ও বড়ন্তিতে ঘুরতে আসার পরিকল্পনা নিয়ে তিন জায়গাতেই অতিথিশালার ঘর বুক করেছিলেন হাওড়ার আন্দুলের সুনীল সর্দার ও চন্দন মুর্মু। সুনীলবাবু বলেন, ‘‘পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাব। কিন্তু ভোটের সময়ে কী পরিস্থিতি হবে জানি না। তাই ওই চার দিন পুরুলিয়া যাওয়া স্থগিত করেছি।” ভোটের পরে ঘুরে যাবেন বলে ঠিক করেছেন তাঁরা।
অযোধ্যা পাহাড়ের একটি অতিথিশালার কর্মকর্তা জয়ন্ত মাহাতো বলেন, ‘‘যত দিন পলাশ থাকে, তত দিন পর্যটকদের আসার আশা থেকেই যায়। বুকিং বাতিল না করে বেশির ভাগ লোকজন যদি ভোটের পরেই ঘুরে যান, তা হলে কিছুটা
অন্তত পুষিয়ে যাবে।’’