মোটরবাইকে এসে হামলা
মন্তেশ্বর : এলাকার পর এলাকা জুড়ে চলছে মোটরবাইক বাহিনীর দাপট। দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লাগাতার চলছে হুমকি দেওয়াও। সোমবার মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় শাকদলের মোটরবাইক বাহিনীর তাণ্ডবের এমনই গুচ্ছ অভিযোগ করল সিপিএম। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার জয়রামপুর, বালিজুড়ি, কামড়া প্রভৃতি এলাকায় প্রচার চালাচ্ছিলেন ফাল্গুনী রায় নামে এক কর্মী। কামড়া গ্রামে প্রচার চালানোর সময় আচমকাই তৃণমূলের একটি মোটরবাইক বাহিনী তাঁর মিছিলে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হুমকির মুখে পড়ে তাঁকে প্রচার না করেই ফিরে আসতে হয়।
বামেদের অভিযোগ, ওই মোটরবাইক বাহিনীটিই এরপর হানা দেয় কুসুমগ্রামের লেবুতলায়। ওখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছিলেন সিপিএম নেতা রুবেন রায় ও কয়েক জন কর্মী। অভিযোগ, একটি বাড়িতে প্রচারের সময় হাজির হয় মোটরবাইক বাহিনী। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, এরপরেই অশান্তি এড়াতে এলাকা ছাড়েন নেতা, কর্মীরা। সিপিএমের মেমারি ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক অশেষ কোনারের অভিযোগ, ‘‘আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে শাসকদল। আমরা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছি।’’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে মন্তেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী সজল পাঁজার বক্তব্য, ‘‘সিপিএমের সব অভিযোগই ভিত্তিহীন।’’
মার কাটোয়ায়
কাটোয়া : তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার চালানোয় এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ উঠল সিপিএমের বিরুদ্ধে। কাটোয়ার চন্দ্রপুর গ্রামের ঘটনা। বিশ্বনাথ প্রধান নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি রবিবার মঙ্গলকোটের তৃণমূল প্রার্থী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর সমর্থনে প্রচারে গিয়েছিলেন। প্রচার চলাকালীনই ন’জন সিপিএম কর্মী লাঠি, টাঙি হাতে বিশ্বনাথবাবুর উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জখম কর্মীকে দেখতেও আসেন তৃণমূল প্রার্থী। যদিও হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিপিএম।
ভোটে মৃত্যু দু’জনের
দুর্গাপুর ও জামুড়িয়া: ভোটের দিনে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল শিল্পাঞ্চলে। প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের টেটিখোলা গ্রামের একটি বুথে ভোটের কাজে যুক্ত ছিলেন পরিমল বাউড়ি (৪৬) নামে এক ব্যক্তি। ভোট শুরু ঘণ্টা খানেক বাদেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে খবর। তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকদের অনুমান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে ওই ভোটকর্মীর। পরিমলবাবুর বাড়ি জামুড়িয়ার চুরুলিয়ার তালডাংরায়। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে অবিনাশবাবুর আক্ষেপ, ‘‘কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না!’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (নির্বাচন) প্রণব বিশ্বাস জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুসারে ওই ভোটকর্মীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
সোমবার জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামে এক ভোটারেরও মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। মৃতের নাম নাম শশাঙ্ক ভট্টাচার্য (৭৫)। এ দিন তিনি কেন্দা গ্রামে ২১৮ নম্বর বুথে ভোট দিতে যান শশাঙ্কবাবু। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন শশাঙ্কবাবু। তারপর বাড়ি ফিরে যান ওই ব্যক্তি। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ভোট পড়ল ৭৭ শতাংশ
দুর্গাপুর : জেলার শিল্পাঞ্চলের নয়টি আসনে সোমবার প্রাথমিক ভাবে ৭৭ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে জানালেন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। রানিগঞ্জে ৭৫ শতাংশ, জামুড়িয়ায় ৭৭, পাণ্ডবেশ্বরে ৭৯, দুর্গাপুর পূর্বে ৮০, দুর্গাপুর পশ্চিমে ৮০, আসানসোল দক্ষিণে ৭৫, আসানসোল উত্তরে ৭২, কুলটিতে ৭২ এবং বারাবনিতে ৭৯ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান তিনি। জেলাশাসক সৌমিত্রবাবু বলেন, ‘‘মোটের উপর শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল নাগাদ প্রাপ্ত ভোটের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব হবে।’’ তিনি আরও জানান, এ দিন মোট ২০ লক্ষ ৩০ হাজার ভোটার ২৩৮১টি বুথে ভোট দিয়েছেন। অনলাইনে মোট ৫৮৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রায় সমান সংখ্যক অভিযোগ ফোন ও এসএমএসের মাধ্যমে জমা পড়েছে। সবগুলির সুরাহা করা হয়েছে বেল দাবি তাঁর। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ৯ জন অবজার্ভার এবং ৭৮২ জন মাইক্রো অবজার্ভার। বিভিন্ন কারণে ১৬টি ইভিএম বদলাতে হয়। কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে চার জন প্রিসাইডিং অফিসার এবং ৩১ জন অন্যান্য ভোটকর্মীকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ইভিএম বিভ্রাট
দুর্গাপুর : ইভিএম খারাপ হয়ে গিয়ে দুর্গাপুরে কয়েকটি বুথে ভোট গ্রহণ কিছু সময়ের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের আমরাই প্রাথমিক স্কুলের একটি বুথে ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের হাটতলা প্রাথমিক স্কুলের একটি বুথে ইভিএম খারাপ ছিল। পরে সেগুলি বদলে দেওয়া হয়। ভোট শুরুর কিছু সময় পরেই ইভিএম খারাপ যায় দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের সরস্বতীগঞ্জ গ্রামের ১০৫ নম্বর বুথে। খবর পেয়ে নির্বাচন কমিশনের তরফে ইভিএমটি দ্রুত মেরামত করে ফের ভোট দেওয়া শুরু হয়। আবার দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের ইস্পাতপল্লির ৮৮ নম্বর বুথে ইভিএমে তৃণমূল প্রার্থীর নামের পাশে কালি দিয়ে চিহ্নিত করা রয়েছে বলে সিপিএমের তরফে অভিযোগ জানানো হয়। সেটিও দ্রুত বদলে দেওয়া হয়।
ভোটার নিয়ে বুথে
কাঁকসা : ভোটারকে নিয়ে বুথের মধ্যে ঢুকে পড়ার অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে কাঁকসার বাঁশকোপার ২৪৪ নম্বর বুথে। সিপিএমের অভিযোগ, ওই তৃণমূল কর্মী বুথে ঢোকার সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীও কোনওরকম বাধা দেননি। যদিও স্থানীয় তৃণমূলে নেতৃত্বের দাবি, ওই ব্যক্তি অসুস্থ ছিলেন। তাই তাঁকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।