সিঙ্গুরে প্রার্থী বদলের দাবিতে অনশনে বিজেপি নেতা-কর্মীরা। ছবি: দীপঙ্কর দে
প্রার্থী নিয়ে কোথাও কোনও অসন্তোষ নেই বলে বৃহস্পতিবারই আরামবাগে এসে দাবি করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আর এ দিন সন্ধে থেকেই সিঙ্গুরের দলীয় প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে বদলের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করলেন স্থানীয় বিজেপি নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ। তৃণমূল-ত্যাগী দেবব্রত বিশ্বাসকে সপ্তগ্রামে প্রার্থী করা হতে পারে, এই আশঙ্কায় গত রবিবার বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন সেখানকার গেরুয়া শিবিরের লোকজন। দেবব্রতকেই প্রার্থী করা হয়েছে। তবে, এ দিন সে কথা জানার পরে সপ্তগ্রামে কোনও অসন্তোষ সামনে আসেনি।
গত রবিবার বিজেপি প্রাথী-তালিকা ঘোষণা করা ইস্তক সিঙ্গুর থেকে তৃণমূল-ত্যাগী রবীন্দ্রনাথকে বদলের দাবি উঠছিল দলের অন্দর থেকে। সেই দাবি রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও পৌঁছেছে। কিন্তু এখনও প্রার্থী বদল না-হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে সিঙ্গুর স্টেশন লাগোয়া বুড়োশান্তি মাঠে মঞ্চ বেঁধে আমরণ অনশন শুরু করলেন বিজেপির মোট আটজন স্থানীয় সংগঠনের পদাধিকারী। তাঁদের দাবি, তাঁদের সঙ্গে সিঙ্গুরে ২৭৭টি বুথের সভাপতি, সিঙ্গুরে দলের জেলা কমিটির তিন সহ-সভাপতি এবং রাজ্য কমিটির স্থানীয় তিন সদস্য-সহ প্রত্যেক পদাধিকারী রয়েছেন।
বিজেপির সিঙ্গুর মণ্ডলের সহ-সভাপতি গৌতম মোদক বলেন, ‘‘আমরা দলের বিরুদ্ধে নয়। দল ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে। যাঁর দলের লোকজন এতদিন আমাদের উপর অত্যাচার করল, তিনি বিজেপিতে যোগ দিতেই প্রার্থী করে দেওয়া হল। ওঁকে আমরা মানব না। অনেক অনুরোধের পরেও উনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি। আমাদের দলীয় সংগঠনের যাঁকে খুশি দল প্রার্থী করুক, শুধু রবীন্দ্রনাথবাবুকে নয়।’’
এ দিন অনশন-মঞ্চে থাকা সিঙ্গুরে দলের জেলা কমিটির এক সহ-সভাপতি বলেন, ‘‘আমরা আন্দোলন করে গত লোকসভা নির্বাচনে সিঙ্গুর থেকে দলের প্রার্থীকে জেতালাম। আর সেই সিঙ্গুরকেই এখন অবহেলা করছে দল।’’ যদিও দলের হুগলি জেলা সাংগঠনিক (সদর) সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘দল ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তনের কোনও জায়গা নেই। তৃণমূলের একাংশের উস্কানিতেই সিঙ্গুরে
ওইসব হচ্ছে।’’ তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। প্রার্থী রবীন্দ্রনাথবাবু
বলেন, ‘‘আমি প্রচার শুরু করে দিয়েছি। দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথাও হয়েছে।’’
সপ্তগ্রামে অবশ্য প্রার্থী নিয়ে এ দিন নতুন করে আর কোনও অসন্তোষ সামনে আসেনি। বিক্ষুব্ধদের কথায় কান না দিয়ে দেবব্রত বিশ্বাসকেই সপ্তগ্রামে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এই কেন্দ্রে তাঁর মূল লড়াই তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা, বিদায়ী বিধায়ক তথা মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে।
তৃণমূলে থাকাকালীন দেবব্রতর বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং তাঁদের দলীয় কর্মীদের উপর হামলা-সহ নানা অভিযোগ তুলেছিলেন পদ্ম শিবিরের ‘আদি’ নেতা-কর্মীরা। গত রবিবার বিধানসভা এলাকা জুড়ে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। রাস্তা অবরোধ হয়। চুঁচুড়ায় দলের জেলা কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগও ওঠে। এলাকার দীর্ঘদিনের নেতা রাজকমল পাঠককে প্রার্থী করার দাবি ওঠে।
এ দিন দলের ত্রিবেণী মণ্ডলের নেত্রী রেখা সাউ বলেন, ‘‘চেয়েছিলাম উনি (দেবব্রত) প্রার্থী না হোন। স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তির প্রার্থী চেয়েছিলাম। দল না শুনলে কী আর করব! পরবর্তী পদক্ষেপ পরে ঠিক করা হবে।’’ দেবব্রতর বক্তব্য, ‘‘দলের সিদ্ধান্তে টিকিট পেয়েছি। ক্ষোভ-বিক্ষোভ কিছু থাকলে সকলের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে নেব।’’