গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তৃণমূলে কারও দমবন্ধ হয়ে আসছিল। কাউকে তৃণমূল টিকিট দেয়নি বলে প্রকাশ্যেই কান্নাকাটি জুড়েছিলেন। উভয়পক্ষই পা বাড়িয়েছিলেন বিজেপি-র দিকে। তাঁদের মধ্যে কারও কারও ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল। আবার কেউ কেউ ফিরলেন শূন্যহাতে।
১০টি আসন বাদ রেখে বৃহস্পতিবার শেষ চার দফার প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। তাতে উল্লেখযোগ্য নাম তিন প্রাক্তন মেয়রের। বিধাননগরের সব্যসাচী দত্ত, হাওড়ার রথীন চক্রবর্তী এবং আসানসোলের জিতেন্দ্র তিওয়ারির। ২০১৯-এর শেষ দিকে মুকুল রায়ের হাত ধরে তৃণমূল ছেড়ে পদ্মশিবিরে যোগ দিয়েছিলেন সব্যসাচী। তার পর থেকেই লাগাতার জোড়াফুল শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দেগে যাচ্ছিলেন তিনি। বিধাননগরে যে তিনি দাঁড়াতে চান, তা তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছিলেন। তাঁর বিধাননগরে টিকিট প্রাপ্তিতে সেই জল্পনায় সিলমোহর পড়ল। হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীনকে শিবপুরে প্রার্থী করেছে বিজেপি। গত ২ মার্চ তৃণমূল থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরই বিজেপি-তে যোগ দেন পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র। পাণ্ডবেশ্বরের টিকিটই তাঁকে দিয়েছে বিজেপি।
তাঁর কেন্দ্র হাওড়ার বালি থেকে টিকিট পেয়েছেন বৈশালী ডালমিয়া। এমন শিকে ছেঁড়ার উদাহরণ অবশ্য আরও কিছু আছে। দলবিরোধী কাজকর্মের জন্য ২০১৯-এর মাঝামাঝি মুকুল রায়ের পুত্র শুভ্রাংশু রায়কে সাসপেন্ড করেছিল তৃণমূল। তার এক সপ্তাহের মধ্যে পদ্মশিবিরে নাম লেখান শুভ্রাংশু। নীলবাড়ির লড়াইয়ে তাঁকে উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুরে তাঁরই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কালনার দু’বারের বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু ডিসেম্বরে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। তিনিও নিজের কেন্দ্র থেকেই টিকিট পেয়েছেন। নিজের কেন্দ্র থেকে টিকিট পেয়েছেন তৃণমূল ছেড়ে আসা পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় এবং বিধায়ক সুনীল সিংহও। তৃণমূলে থাকাকালীন রানাঘাট উত্তরের বিধায়ক ছিলেন পার্থসারথি। উপনির্বাচনে জিতে জোড়াফুল থেকে নোয়াপাড়ার বিধায়ক নির্বাচিত হন সুনীল সিংহ। তাঁদের দু’জনকেই টিকিট দিয়েছে বিজেপি।
২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের বিধায়ক ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ রায়। তৃণমূল ছেড়ে আসার পর ওই কেন্দ্রের টিকিটই তাঁকে দিয়েছে বিজেপি। বাবা সজল পাঁজার মৃত্যুর পর ২০১৬-য় তৃণমূলের হয়ে মন্তেশ্বর কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন সৈকত পাঁজা। বিজেপি-তে গিয়েও ওই কেন্দ্রের টিকিটই পেয়েছেন তিনি। সিপিএম থেকে বিজেপি-তে যাওয়া শঙ্কর ঘোষও শিলিগুড়ির টিকিট পেয়েছেন। ব্যারাকপুরের প্রাক্তন বিধায়ক শীলভদ্র দত্তকে খড়দহে প্রার্থী করেছে বিজেপি। সব্যসাচীর পর পরই বিজেপি-তে যোগ দেওয়া তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামীকে উত্তরবঙ্গের নাটাবাড়ি থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। আবার তৃণমূলে যিনি বিধায়কও ছিলেন না, তৃণমূল-ত্যাগী হুগলির সেই নেতা দেবব্রত বিশ্বাস দলে যোগ দেওয়ার পর এক সপ্তাহ কাটার আগেই সপ্তগ্রামের টিকিট পেয়েছেন। যদিও দেবব্রতকে প্রার্থী করার বিরোধিতাতেই বিক্ষোভ হয়েছিল হুগলিতে। এমনকি, রেল লাইনে শুয়ে পড়ে আত্মহত্যাও করতে গিয়েছিলেন স্থানীয় এক বিজেপি নেতা।
কিন্তু তার পরেও খালি হাতে থাকতে হচ্ছে তপনের বাচ্চু হাঁসদা (রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী), বসিরহাট দক্ষিণের দীপেন্দু বিশ্বাস (প্রাক্তন ফুটবলার) বা তমলুকের সিপিআই বিধায়ক অশোক ডিন্ডাকে। এঁরাও দলের কাছে টিকিট না পেয়ে বিজেপি-তে গিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই মনোনয়ন পাননি। শিকে ছেঁড়েনি সোনালি গুহেরও। বৃহস্পতিবার বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর দেখা গেল, টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপি-তেও ‘ব্রাত্য’ হয়ে রইলেন তাঁরা। যেমন ব্রাত্য হয়ে রইলেন অমিত শাহের সভায় শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া সুকরা মুণ্ডা। নাগরাকাটায় তাঁকে প্রার্থী না করে পুনা ভেঙরাকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রার্থী করা হয়নি তৃণমূল থেকে বিজেপিৃতে যোগ দেওয়া মালদহের সরলা মুর্মুকেও। সরলাকে মালদহের হবিবপুর কেন্দ্রের প্রার্থী করেছিল জোড়াফুল শিবির। কিন্তু তার পর বিজেপি-তে যোগ দেন সরলা। প্রথম চার দফার প্রার্থিতালিকা নিয়ে এর আগে জেলায় জেলায় বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল বিজেপি-কে। এ দিনও সেই ছবি দেখা গিয়েছে একাধিক জায়গায়। দু’দিন আগে তৃণমূল থেকে ‘উড়ে আসা নেতাদের কেন ‘জুড়ে বসতে’ দেওয়া হচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। তবে বৃহস্পতিবারের ঘোষণার পর বিজেপি-র নির্বাচনী কার্যলয় হেস্টিংসে তেমন কোনও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি।