নিহত বাপি আঁকুড়ের শোকার্ত পরিজনেরা। মঙ্গলবার ইলামবাজারের নান্দার গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
নিখোঁজ এক বিজেপি কর্মীর দেহ উদ্ধার হল নদীর চর থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম বাপি আঁকুড়ে (২৬)। ইলামবাজারের নান্দার গ্রামের বাসিন্দা বাপি সোমবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। মঙ্গলবার সকালে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাল নদীর চরে বাপির মৃতদেহ দেখতে পান স্থানীয়েরা। পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ভোটের মুখে এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে। পেশায় রং মিস্ত্রি বাপি সক্রিয় ভাবে বিজেপি করতেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন। একই দাবি করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পরিবারের লোকেদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করেছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। বিজেপি-র অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের দিকে। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যদিও বাপির মৃত্যু ঠিক কী ভাবে হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
তবে, এই ঘটনা ঘিরে এলাকায় যথেষ্ট হইচই হয়েছে। বাপিকে ‘খুনের’ প্রতিবাদে এ দিন ইলামবাজারে বিজেপি-র কার্যালয় থেকে ইলামবাজার থানা পর্যন্ত মিছিল করেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। দোষীদের শাস্তির দাবিতে মিছিলে স্লোগান দেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা, জেলা সহ-সভাপতি বলাই চট্টোপাধ্যায় সহ জেলার নেতারা। এ দিন বিকেলে বাপির পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি-র রাজ্য নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। সেখান থেকে ইলামবাজর থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। নির্বাচন কমিশনের কাছেও ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে আর্জি জানানো হয়েছে বলে অনির্বাণবাবু জানিয়েছেন।
নিহতের জ্যেঠু মথুরা আঁকুড়ে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘সোমবার দুপুরে কাজ থেকে ফিরে দু’কিলোমিটার দূরে কুড়মিঠা গ্রামের সেলুনে চুল কাটতে গেল বাপি। আর ফিরল না। মঙ্গলবার সকালে ওর দেহ যখন নদীর চরে পাওয়া গেল, তখন গলায় একটা রুমালের ফাঁস ছিল।’’
বিজেপি-র জেলা সভাপতির অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলই বারবার বলেছেন ভোটের সময় খেলা হবে। বিজেপি কর্মীদের ঠেঙিয়ে পগার পার করার হুমকিও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে। সেই খেলাই এ বার শুরু হয়ে গেল। তবে, এ ভাবে বিজেপি-কে দমিয়ে রাখা যাবে না।’’ দোষীদের শাস্তি না হলে আগামী দিনে বীরভূম জেলা অচল করে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ধ্রুববাবু।
যদিও ইলামবাজার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ফজলুল রহমান দাবি করছেন, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিজেপি-র নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। অথচ আজ তৃণমূলের নামে দোষ চাপানো হচ্ছে। পুলিশকে বলেছি ঘটনার সঠিক তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করা হোক এবং দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।”
বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা নিয়ে শাসক-বিরোধী টানাপোড়েন শুরু হলেও জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। খুনের অভিযোগ যেহেতু হয়েছে, তাই খুনের মামলাও শুরু হয়েছে। কিন্তু এটা খুনের ঘটনা না কি অন্য কোনও ভাবে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে, আর তার পিছনে আসল কারণ কী, সবটাই জানা যাবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে।’’