মৃত তৃণমূল কর্মী দুর্গা সরেন। নিজস্ব চিত্র।
কয়েক দিন পরেই প্রথম দফার নির্বাচন। তার আগেই ঝাড়গ্রামে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়গ্রাম থানার আগুইবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের নেতুরা গ্রামে। মৃত তৃণমূল কর্মীর নাম দুর্গা সরেন(৫৫)। তাঁর বাড়ি পিন্ডরা গ্রামে। মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিলেও, তৃণমূলের অভিযোগ দুর্গাকে খুন করা হয়েছে। অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিজেপি-র দিকে। তবে বিজেপি-র স্থানীয় নেতৃত্ব সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে ঝাড়গ্রাম শহরে অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীরা। পুলিশ জানিয়েছে, একটা ঘটনা ঘটেছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে তা ময়না তদন্তের পর জানা যাবে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার দুপুরে দুর্গা ও তাঁর স্ত্রী চিকিৎসককে দেখানোর জন্য নেতুরা গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় স্থানীয় কিছু বিজেপি-র লোকজন তাঁদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এই ঘটনার জেরে সন্ধ্যার পরে নেতুরা বাসস্ট্যান্ডে কিছু তৃণমূল কর্মী ওই এলাকার বিজেপি-র পঞ্চায়েত সদস্য মানিক সাউয়ের ভাই তারক সাউকে মারধর করে দু’টি হাত ভেঙে দেয় বলে পাল্টা অভিযোগ উঠে। তারককে হাসপাতালে নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পরে দুর্গা সরেনকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুর্গাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। স্থানীয়দের দাবি, বেশ কিছু ক্ষণ নিখোঁজ থাকার পর অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হয় দুর্গা। তার পরই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কী কারণে দুর্গার মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়ে গিয়েছে ঝাড়গ্রামে।
এই ঘটনার জেরে নেতুরা গ্রামে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসে কেন্দ্রীয়বাহিনী। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। খবর পেয়ে হাসপাতালে যান ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার। হাসপাতাল চত্বরেও মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। মৃত তৃণমূল কর্মীর স্ত্রী সাকরো সরেনের অভিযোগ, রবিবার দুপুরে স্বামীর সঙ্গে চিকিৎসককে দেখানোর জন্য নেতুরা গিয়েছিলেন। ফেরার পথে বিজেপি-র লোকজন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। অন্য দিকে আক্রান্ত তারকের দাদা মানিকের পাল্টা অভিযোগ, “আমার ভাইকে তৃণমূলের লোকজন মারধর করেছে। তার দু’টি হাত ভেঙে দিয়েছে। তাকে তির মারা হয়েছে।”
রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে যান। তিনি বলেন, “গালিগালাজের প্রতিবাদ করায় দুর্গাদাকে মরতে হল। উত্তরপ্রদেশের কালচার আনতে চাইছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর অধীনে রয়েছে, নির্বাচন কমিশন কী জবাব দেবে। সোমবার থেকে জঙ্গলমহল জুড়ে প্রতিবাদ জানানো হবে।” ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর উজ্জ্বল দত্তের দাবি, “তৃণমূল কর্মী দুর্গা সরেনকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে হবে। তৃণমূলের তোলা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি তুফান মাহাত বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপি-র কোনও যোগ নেই। ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। পুলিশ বিষটি নিয়ে তদন্ত করছে।”