স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। —ফাইল চিত্র
হাওড়ায় দু’দফা ভোটের মোট সাড়ে ৫ হাজার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৫০০টি কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর বলে ঘোষণা করল জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, পুলিশের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে স্পর্শকাতর বুথের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তা ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। তা থেকে দেখা যাচ্ছে, হাওড়া জেলায় মোট স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা ৪৯৪টি। যার মধ্যে হাওড়ার গ্রামীণ এলাকাতেই রয়েছে ৩৯৯টি স্পর্শকাতর বুথ এবং হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় রয়েছে ৯৫টি। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
হাওড়ায় ৬ এপ্রিল ও ১০ এপ্রিল, এই দু’দফায় ভোট গ্রহণের দিন ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন। হাওড়া গ্রামীণে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা হচ্ছে ২৪৩২ এবং সদরে ৩১২৪টি। ভোটের জন্য ইতিমধ্যে দু’কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী হাওড়ায় এসে গিয়েছে। আরও কত বাহিনী আসবে, তা নিয়ে অবশ্য এখনই প্রশাসনের কাছে খবর নেই। তবে র্স্পশকাতর বুথগুলিতে যে বেশি সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ও মাইক্রো অবজ়ার্ভারেরা থাকবেন, তা নিশ্চিত।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার মতে, গত নির্বাচনগুলিতে শহরের থেকে গ্রামীণ হাওড়ার আমতা, বাগনান, উলুবেড়িয়া, পাঁচলা ইত্যাদি এলাকায় হিংসার ঘটনা বেশি দেখা গিয়েছে। তাই এ বার গ্রামীণ হাওড়া এলাকাতেই বেশি স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এ বার নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকেই অবশ্য শহর এলাকাতেও তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে নানা জায়গায়। তাই প্রাথমিক ভাবে শহরের মাত্র ৯৫টি বুথকে স্পর্শকাতর চিহ্নিত করা হলেও এই সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই জেলা প্রশাসনের একাংশের মত।
এ দিন জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনৈতিক দল ও পুলিশের মতামত ছাড়াও বিগত নির্বাচনগুলিতে কোন কোন জায়গায় বেশি হিংসার ঘটনা ঘটেছিল বা ভোট না দিতে দেওয়ার একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল, সে সব বিষয়েও খতিয়ে দেখা হয়েছে স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় এই ধরনের বুথগুলি রয়েছে উত্তর হাওড়া, মধ্য হাওড়া, দক্ষিণ হাওড়া, শিবপুর, সাঁকরাইল, ডোমজুড়, বালি বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে। তাই ইতিমধ্যে ঘোষিত স্পর্শকাতর বুথগুলির মধ্যে উত্তর হাওড়া, শিবপুর এবং বালিতে বেশির ভাগ জায়গা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য সারা জেলায় ১২০০ বুথ বেশি হচ্ছে। এর পাশাপাশি কোনও বাড়ি বা স্কুলঘরের দোতলায় কোনও ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করা যাবে না বলেও নির্দেশ এসেছে। এই কারণে মোট ১৬৮টি অস্থায়ী ভোটগ্রহণ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে হাওড়ায়। রাজ্য পূর্ত বিভাগই এগুলি প্লাইউড এবং টিন দিয়ে তৈরি করবে বলে ঠিক হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ওই কর্তা জানান, হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় ১৪৮টি এবং গ্রামীণ পুলিশ এলাকায় ২০টি এ রকম অস্থায়ী বুথ গড়া হবে। হাওড়া শহর, বিশেষত উত্তর হাওড়া, বালি ইত্যাদি এলাকা যে হেতু খুব ঘিঞ্জি, তাই অনেক জায়গাতেই দোতলায় ভোট গ্রহণ করা হত। এ বার তা হবে না। সেই জায়গায় ১৪৮টি অস্থায়ী বুথ তৈরি করা হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি ঘোষণা হওয়ার পরে এই ক’দিনে জেলার সমস্ত সরকারি সম্পত্তি থেকে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচারমূলক সব হোর্ডিং, ব্যানার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুরসভাকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পুর অফিসগুলিতে থাকা সমস্ত দলের ব্যানার হোর্ডিং সরিয়ে দিতে।