শিয়রে: ভোটের দিন ঘোষণা হতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচার-সামগ্রী কেনার ভিড়। বুধবার, বড়বাজারে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
বয়স্ক এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম ভোটারেরা যাতে বাড়িতে বসেই ভোট দিতে পারেন, এ বার থেকে সেই ব্যবস্থা চালু করছে নির্বাচন কমিশন। আর সেই কারণে হাওড়ায় এমন ৮৫ হাজার ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে ভোটকর্মীদের নিয়ে মোট ৭০৪টি দল তৈরি করছে প্রশাসন। ভোটের ছ’দিন আগে তাঁদের কাছে পৌঁছবে ব্যালট পেপার। তবে এই নতুন নিয়ম কার্যকর করা নিয়ে আপাতত বেজায় চিন্তায় জেলা প্রশাসন।
করোনা পরিস্থিতিতে এ বার একাধিক নতুন নিয়ম চালু করে ভোটপর্ব পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই প্রথম ৮০ বছরের বেশি বয়সি এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর সেই নির্দেশ কার্যকর করতে তৎপর হয়েছে হাওড়া জেলা প্রশাসন। ভোটারদের নামের তালিকা থেকে জানা গিয়েছে, সারা জেলায় এরকম প্রায় ৮৫ হাজার মানুষের কাছে ব্যালট পেপার পৌঁছে দিতে হবে ভোটকর্মীদের, যার মধ্যে প্রায় ৬৮ হাজার ভোটারের বয়স আশি বছরের ঊর্ধ্বে। আর হাওড়ায় বিশেষ ভাবে সক্ষম ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।
হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এত মানুষের কাছে পৌঁছে ভোট নেওয়াটা এ বারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তার আগে যাঁরা বুথে না গিয়ে বাড়িতে থেকেই ভোট দিতে চাইবেন, তাঁদের কাছে পৌঁছে যাবেন ভোটকর্মীরা। সেই কাজও এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হচ্ছে।’’ ওই কর্তা জানাচ্ছেন, এই কাজ করার জন্য ইতিমধ্যে দু’জন করে কর্মী নিয়ে মোট ৭০৪টি দল তৈরি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভোটার তালিকার মধ্যে থেকে বয়স্ক এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদের নাম-ঠিকানা নিয়ে একটি পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে বিশেষ ১২ডি ফর্ম নিয়ে সেই তালিকাভুক্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কাজ শুরু হবে। এই বিশেষ তালিকাভুক্ত ভোটারদের মধ্যে যাঁরা বাড়িতে থেকেই ভোট দিতে চান, তাঁরা ওই ফর্মে নিজেদের সম্মতি জানাবেন। ভোটগ্রহণের ছ’দিন আগে তাঁদের বাড়িতে ভোটকর্মীরা ব্যালট পেপার নিয়ে পৌঁছে যাবেন। সেখানেই ভোট দেবেন সংশ্লিষ্ট ভোটার।
কিন্তু এ ভাবে ভোট হলে স্বচ্ছতা বজায় রাখা কি ভাবে সম্ভব?
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ভোটকর্মীরা এই ভাবে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটগ্রহণ করতে যাবেন, তাঁদের সঙ্গে থাকবেন এক জন সেক্টর অফিসার ও পুলিশ। ওই সব ভোটদাতার বাড়ি যাওয়ার আগে সেখানকার প্রার্থীদেরও জানিয়ে দেওয়া হবে যে, কোন দিন কত নম্বর বুথে এই ভাবে ভোটগ্রহণ করতে যাওয়া হবে। সেই মতো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও ভোট দেওয়ার সময়ে সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন। এই কাজের জন্য বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে ৭০৪টি দলের সদস্যদের।
নির্বাচন কমিশনের এই নতুন নিয়ম কার্যকর করতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হাওড়ার প্রশাসনিক কর্তারা। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এ বার যে হেতু প্রায় ১২০০টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র বেশি হচ্ছে, তাই ব্যাপক সংখ্যায় মহিলা ভোটকর্মীকেও বাধ্য হয়েই কাজে লাগাতে হচ্ছে। হাওড়া জেলায় প্রায় ৮০০টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থাকবে যা হবে পুরোপুরি ভাবে মহিলা পরিচালিত। তবে ওই মহিলা ভোটকর্মীদের তাঁদের নিজস্ব বিধানসভা কেন্দ্রেই অন্য কোনও বুথের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে
জেলা প্রশাসন।