তথাগত রায়।
নন্দীগ্রামের পাশাপাশি পুরনো কেন্দ্র ভবানীপুর থেকেও কি বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? নন্দীগ্রামের যে সভায় মমতা নন্দীগ্রামে লড়ার বাসনা ব্যক্ত করেছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেন, নন্দীগ্রাম তাঁর ‘মেজবোন’। আর ভবানীপুর তাঁর ‘বড় বোন’। তেমন হলে দু’টি কেন্দ্র থেকেই তিনি প্রার্থী হবেন, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু বিজেপি (বিশেষ, শুভেন্দু অধিকারী) বাংরবার বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত শুধু নন্দীগ্রাম থেকেই লড়াই করা। শেষপর্যন্ত মমতা শুধু নন্দীগ্রাম থেকে লড়বেন কি না, তা তিনি নিজে এখনও বলেননি। কিন্তু তাঁর ‘বড় বোন’কে ছিনিয়ে নিতে প্রাথমিক ভাবে প্রার্থী ঠিক ঠিক করে ফেলা হয়েছে বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। সেই প্রার্থীর নাম তথাগত রায়। একদা রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি তথা সদ্য মেঘালয়ের রাজ্যপাল পদ থেকে অবসর নেওয়া রাজনীতিক। সূত্রের খবর, তথাগত নিজেও ভবানীপুরে মমতা-মোকাবিলায় রাজি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রত্যক্ষ রাজনীতিই করেছেন তথাগত। ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজ্য বিজেপি-র সভাপতিও ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তথাগত। ২০০৯ সালে কলকাতা উত্তর এবং ২০১৪ সালে কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। জয় পাননি। সে অর্থে তিনি এই প্রথম দক্ষিণ কলকাতার গুহায় ঢুকছেন না। তার পর তথাগত প্রথমে ত্রিপুরা ও পরে মেঘালয়ের রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। ২০২০ সালের ১৮ অগস্ট রাজ্যপাল পদ থেকে অবসর নেন তিনি। তার পরেই গুঞ্জন ছিল নীলবাড়ির লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে চাইছেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের দাদা।
বিজেপি সূত্রে যা খবর, তাতে এখনও পর্যন্ত ভবানীপুর কেন্দ্রে তথাগতর লড়াই প্রায় নিশ্চিত। রাজ্য বিজেপি-তে তথাগত-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাতে সম্মতি দিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, দল নয়, তথাগতই ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে লড়তে চেয়েছিলেন। কেন ভবানীপুর? তথাগত-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ‘‘দাদার বক্তব্য হল ‘মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভাণ্ডার’। তাই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রই পছন্দ করছেন।’’ মঙ্গলবার তথাগতকে প্রশ্ন করা হলে তিনি আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘প্রার্থী হতেই পারি। তবে কোন কেন্দ্র থেকে, সেটা বাছার দায়িত্ব তো আমার নয়। কেন্দ্র নিয়ে পছন্দও থাকতে পারে। কিন্তু সেটা ঠিক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আমি এ নিয়ে কোনও কথা বলতে পারব না।’’ প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কলকাতা দক্ষিণ আসনে পরাজিত হলেও কয়েকটি বিধানসভা এলাকায় ভাল ফল করেছিল। রাসবিহারী এলাকায় তৃণমূলের থেকে এগিয়েও ছিল তারা। ভবানীপুরে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও ব্যবধান কম ছিল। তৃণমূল পায় ৬১,১৩৭টি ভোট। সেখানে বিজেপি-র ঝুলিতে ছিল ৫৭,৯৬৯টি ভোট।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে ভবানীপুর আসনটিকে সেই কারণেই ‘সুবিধাজনক’ বলে মনে করছে বিজেপি। যদিও লোকসভা নির্বাচন আর বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে যে অনেক ফারাক, সেটাও মাথায় রাখছে গেরুয়া শিবির। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে এমন কাউকে তারা প্রার্থী করতে চাইছে, যাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির পাশাপাশি অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তথাগতকে প্রার্থী করলে সেই দুই বিষয়ই মিলবে বলে মনে করছে দল। যদিও প্রার্থিতালিকা ঘোষণার আগে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ রাজ্য বিজেপি-র শীর্ষনেতৃত্ব। সম্প্রতি টলিউডের এক অভিনেত্রীর সঙ্গে টুইট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তথাগত। সেই বিষয়টি আইনি মোড়ও নিয়েছে। তবে সেই সময়ে দল তথাগতর পাশেই দাঁড়িয়েছিল। দিন কয়েক আগেই ওই অভিনেত্রী আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমুলে যোগ দিয়েছেন। এর পরে তথাগতর সঙ্গে তাঁর আকচাআকচি কোনও নতুন মোড় না নিলেও ওই প্রসঙ্গ এখনও আলোচনায় রয়েছে। তথাগত-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, ‘‘ওই বিতর্ক দাদার পক্ষে হিন্দু ভোট এককাট্টা করার কাজটাও করে দেবে। ফলে ভবানীপুরে তিনি দাঁড়ালে ভাল বই খারাপ হবে না।’’