গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কেন্দ্রীয় সরকারের জুট কর্পোরেশনের অস্থাযী চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। গত ডিসেম্বরে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাঁকে ওই পদে বসানো হয়েছিল। ওই শীর্ষ সরকারি পদের মর্যাদা একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মতোই। পদের মেয়াদ ছিল তিন বছর। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার দু’মাসের মধ্যেই ওই পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানিয়েছেন, ‘‘নির্বাচনের কাজে শুভেন্দুর উপর চাপ বাড়ছে। ভোট নিয়ে অন্য অনেক বিষয়ে তাঁকে জড়িত থাকতে হচ্ছে। সেই কারণেই এই পদ ছেড়েছেন শুভেন্দু।’’ ইস্তফাপত্রে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের দেওয়া জুট কর্পোরেশনের অস্থায়ী চেয়ারম্যানের পদ আমি থেকে ইস্তফা দিচ্ছি। দয়া করে আমার ইস্তফাপত্র গ্রহণ করবেন।’
শুভেন্দুর ইস্তফা নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, যে কাউকেই ভোটে দাঁড়াতে গেলে সরকারি পদ ছাড়তে হয়। নইলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ‘লাভজনক পদে’ (অফিস অব প্রফিট) থাকার আওতায় পড়ে যাবেন। সেই কারণেই শুভেন্দুকে ভোটে দাঁড়াতে গেলেও তাঁর সরকারি পদ ছাড়তেই হত। অর্থাৎ, শুভেন্দুর এই ইস্তফায় এটাই প্রতিষ্ঠিত হল যে, তিনি ভোটে লড়ছেন। এখন দেখার, শুভেন্দুকে তাঁর পুরোন কেন্দ্র নন্দীগ্রামেই টিকিট দেয় কি না বিজেপি। যেখানে দাঁড়ানোর বিষয়ে ইতিমধ্যেই প্রকাশ্য সভায় ইচ্ছা প্রকাশ করে রেখেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু দাঁড়ালে গোটা বাংলায় ওই কেন্দ্রই সবচেয়ে নজরকাড়া হতে চলেছে।
মমতা নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার বাসনা যেদিন ঘোষণা করেন, সেদিনই শুভেন্দু মমতার পাড়া হাজরায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন, নন্দীগ্রামে মমতাকে ‘হাফ লাখ’ অর্থাৎ ৫০,০০০ ভোটের ব্যবধানে হারাবেন। নইলে রাজনীতিই ছেড়ে দেবেন। এমনিতেও নন্দীগ্রাম কাঁথির মতোই ‘শুভেন্দুর গড়’ বলেই পরিচিত। কিন্তু বিপক্ষে মুখ্যমন্ত্রী থাকলে সেই লড়াইয়ের জন্য দস্তুরমতো প্রস্তুতি প্রয়োজন। নন্দীগ্রামের ভোট দ্বিতীয় দফায় ১ এপ্রিল। মমতার মতো প্রার্থীকে নিজের মাঠে হারাতে নিঃসন্দেহে কাঠখড় পোড়াতে হবে পূর্ব মেদিনীপুরের ‘ভূমিপূত্র’কে। তাই আপাতত ভোটবাক্সের লড়াইয়েই মন দিতে চাইছেন শুভেন্দু। বিজেপি-র প্রচারের অন্যতম মুখ শুভেন্দু আপাতত নিজের জেলাতেই রয়েছেন। ২৭ মার্চ, প্রথম দফায় কাঁথি এবং এগরা মহকুমায় ভোট। সেই ভোটে বিজেপি-কে জেতানোর দায়িত্বও শুভেন্দুরই কাঁধে। তাই তিনি আপাতত সেদিকেই মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর।