প্রতীকী ছবি।
দুপুরের মধ্যে ৫০ শতাংশ। দিনের শেষে প্রায় ৯০ শতাংশ— দ্বিতীয় দফার ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরে যে হারে ভোট পড়েছে, তাতে খুশি সব রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব। আর সেই ভোটের হার এবং ভোট দেওয়ার গতি দেখে নিজেদের জয় নিয়ে
আশাবাদীও তাঁরা।
তমলুক, পাঁশকুড়া পূর্ব, পাঁশকুড়া পশ্চিম, ময়না, নন্দকুমার, মহিষাদল, হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, চণ্ডীপুর, এই ন’টি কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার ভোট হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলির মধ্যে চণ্ডীপুরে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে, ৮৯.২৮ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে মহিষাদল (৮৮.৫৮) এবং নন্দীগ্রাম (৮৮.০১)। মোট ভোটের অর্ধেকেরও বেশি ভোট পড়ে গিয়েছে দুপুর ১২টার আগেই। নন্দীগ্রাম এবং কয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া তেমন ভাবে সন্ত্রাসের খবরও পাওয়া যায়নি ওই দিন। পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলা, যেখানে লড়ছেন তৃণমূল এবং বিজেপি’র দুই হেভিওয়েট প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী, সেখানে ভোটের হার দেখে নিজেদের জয়ে আশাবাদী তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র।
এত বেশি পরিমাণে ভোট পড়ার বিষয়ে সৌমেনের ব্যাখ্যা, জেলাবাসী বুঝতে পেরেছেন যে, উন্নয়ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই করেছে। তাই তাঁকে জেতাতেই এত ভোট পড়েছে। সৌমেন বলছেন, ‘‘ভোট যে হারে পড়েছে, তা দেখে বুঝতে হবে জনতার রায় উন্নয়নের পক্ষেই। শাসকের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন তাঁরা।’’
আবার, বিরোধী দলের ব্যাখ্যা গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় শাসকদল যে আশান্তি এবং ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল, তার পুনরাবৃত্তি এবার হতে দেয়নি নির্বাচন কমিশন। বিজেপি’র জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়ক বলছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার জেরেই এবার ভোট শান্তিতে হয়েছে এবং এত হারে ভোট পড়েছে। তবে মানুষ পরিবর্তনের পক্ষেই রায় দিয়েছেন।’’
বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষের পর থেকেই তৃণমূল, বিজেপি ও সংযুক্ত মোর্চার নেতারা হিসাব-নিকেশ করতে শুরু করেছেন। যে ন’টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে তমলুক, হলদিয়া ও পূর্ব পাঁশকুড়া, এই তিন কেন্দ্রে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জিতেছিল বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীরা। এবার অবশ্য ওই সব আসনে জয়ের দাবি করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পাশাপাশি, নন্দীগ্রামে মমতার জয় নিয়েও আশাবাদী তাঁরা। সৌমেনের দাবি, ‘‘দ্বিতীয় দফায় যে ৯ টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে, তাতে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সবগুলি কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত।’’
যদিও পূর্ব পাঁশকুড়াতে বিজেপির প্রার্থী জয়ী হবেন বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। কারণ, হিসাবে তাঁরা জানাচ্ছেন, লোকসভা ভোটে বিজেপি ওই কেন্দ্রে যেভাবে ভাল করছে, তাতে এ বার তারাই প্রথম স্থানে থাকবে। পাঁশকুড়া পশ্চিম, নন্দীগ্রাম, ময়নার মতো কেন্দ্রেও জয় তাদের হবে দাবি বিজেপির। বিজেপির জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের মানুষ বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীকে বিপুলভাবে সমর্থন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন বলে আমরা নিশ্চিত। বাকি ৮ টি আসনেও আমাদের প্রার্থীদের জয়ের সম্ভবনা রয়েছে।’’
অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফ মিলে গঠিত সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে সিপিএম জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি দাবি করছেন, ‘‘হলদিয়া, পূর্ব পাঁশকুড়া, চণ্ডীপুর ও মহিষাদল বিধানসভা কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থীদের জয়ের সম্ভবনা রয়েছে।’’ নিরঞ্জনের মতে, ‘‘শুভেন্দুবাবু জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রেই বিজেপি প্রার্থীদের জেতার যে দাবি করেছিলেন সেই দাবি অধরা
থেকে যাবে।’’