বামেদের ব্রিগেড সমাবেশ নিজস্ব চিত্র
সিঙ্গুর-ভুল আর নয়। ক্ষমতায় এলে জমি অধিগ্রহণ নীতি নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করবে বামফ্রন্ট। নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ের নির্বাচনী ইস্তাহারে এমনটাই জানাল তারা। বৃহস্পতিবার সপ্তদশ বিধানসভা ভোটের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করে বামেরা। সেখানেই শিল্প, কৃষি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রমের মতো একাধিক বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতায় থাকাকালীন সিঙ্গুরে শিল্প তৈরির জন্য এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল বামেরা। চার ফসলি শালি জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ ওঠে। তার ফল হয়েছিল বিরূপ। জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই আন্দোলনই বামদের হঠিয়ে মমতাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। জমি অধিগ্রহণের সেই নীতি ভুল ছিল বলে জানিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। বাম নেতাদের অনেকেই সেই জমি অধিগ্রহণের নীতি যথাযথ ছিল না বলে মনে করেছিলেন। তাই বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে সেই দিকটির দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শিল্প নীতি নিয়ে বামদের ইস্তাহারে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতায় এলে শিল্প তৈরির ব্যাপারে জোর দেবে সরকার। তবে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এলাকাভিত্তিতে সহমত তৈরি করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। অধিগৃহীত জমির জন্য পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে’।
বামেদের ইস্তাহারে মূল্য বিষয়গুলি শৌভিক দেবনাথ
লকডাউনে ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বামেরা। সে কারণে ইস্তাহারে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আলাদা দফতর চালুর কথাও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিককে নথিভুক্ত করে অন্য রাজ্যে কর্মরতদের পাশে থাকবে সরকার। একইসঙ্গে ইস্তাহারে জানানো হয়েছে, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মাসে আড়াই হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলি খোলার জন্য পদক্ষেপ করা হবে।
জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই শিক্ষা নীতি নিয়ে ইস্তাহারে কোনও শব্দ ব্যয় করেনি বামেরা। বরং বিকল্প শিক্ষানীতির কথা উল্লেখ করে তারা জানিয়েছে, ‘সরকার ক্ষমতায় এলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক করা হবে। মাধ্যমিক সমতুল ছাত্রছাত্রীদের পারিবারিক আয়ের মাপকাঠিতে এককালীন অর্থ সাহায্য করা হবে’। বামেদের ইস্তাহারে উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন কোনও পদক্ষেপের কথা বলা হয়নি।
রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মতো স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কোনও বিকল্প প্রকল্পের কথা ইস্তাহারে জানায়নি বামেরা। তবে তারা বলেছে, ‘জনস্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারের। বিনামূল্যে সরকারি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। স্বাস্থ্যসাথীর কোনও ধাঁধা নয়, প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হবে। শিশু ও মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হার হ্রাস করার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে’।
বামেদের ইস্তাহারে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কৃষি আইনের বিরোধিতা করা হয়। বিকল্প হিসাবে বলা হয়, ‘অনেকে ভূমি সংস্কারে জমি পেয়েও, তাঁদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমরা সেই জমি ফিরিয়ে দেব। কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করা হবে’। এ ছাড়া বামেদের ইস্তাহারে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের বিল ছাড় দেওয়া, কেন্দ্র ও রাজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বেআইনি চিট ফান্ড, রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।