শালতোড়ায় সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
বিধানসভা ভোটের তৃতীয় ও চতুর্থ দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার বিজেপি নেতৃত্ব। প্রার্থী পছন্দের না হওয়ায় জেলায় জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয় বিজেপি কর্মীদের। বিজেপি-র সেই ঘরোয়া কোন্দলকেই এ বার নির্বাচনী প্রচারে হাতিয়ার করল তৃণমূল। বুধবার বাঁকুড়ার শালতোড়া থেকে যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রার্থী তালিকাকে কেন্দ্র করে বিজেপি কর্মীরাই দলীয় দফতর ভাঙচুর, গন্ডগোল করছেন। যাঁরা নিজেদের ঘরেই শান্তি রাখতে পারেন না, তাঁরা বাংলায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করার কথা বলছেন। এদেরকে বাংলার মানুষ বিশ্বাস করবে না।’’
বুধবার শালতোড়ার তৃণমূল প্রার্থী সন্তোষকুমার মণ্ডলের সমর্থনে রোড শো করেন অভিষেক। শালতোড়ার কলেজ মোড় থেকে চৌরাস্তা মোড় পর্যন্ত অভিষেকের ওই রোড শো-তে ভিড় হয়েছিল। যা নিয়েও বিজেপি-কে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামে অমিত শাহের সভায় ১০০ জন লোকও হয়নি। বুধবার স্মৃতি ইরানির সভা ছিল—‘হাওয়া’, আসেনি। লোক হবে না ভেবে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। গ্রামে জেসিবি মেশিন দিয়ে মাটি কাটার সময় যে লোক হয়, বিজেপি নেতাদের সভায় সে লোকও হয় না। ওদের এমন দুর্গতি হয়েছে যে সকালে চায়ের দোকানে ওদের সভার থেকে বেশি লোক হয়। আর আমাদের সভায় দেখুন এই দুপুর দেড়টায় রোদ মাথায় করে মানুষ এসেছেন। এটা শুধু সমর্থন জানাতে নয়, ভোট দেওয়ার জন্যও এসেছেন।’’ তৃণমূলের দাবি, সোমবার ঝাড়গ্রামের সভায় ভিড় না হওয়ার জন্য ওই কর্মসূচি বাতিল করতে হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। যদিও তার পিছনে হেলিকপ্টার খারাপ হওয়ার কারণ দেখিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে এরপর মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর যোগী আদিত্যনাথের সভাতেও ভিড় দেখা যায়নি। যা নিয়ে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে সতর্কবার্তাও এসেছে দিল্লি থেকে।
সভায় ভিড় প্রসঙ্গে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের পরিবাররে ব্যাপার আমরা মিটিয়ে নেব। আসলে তাঁদের দলের গন্ডগোল এত বেশি যে তাঁদের সব পরিবার থেকে দলে দলে লোক আমাদের পরিবারে চলে আসছে। আর এত লোককে সামাল দিতে এখানে কিছু গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। উনি আগে তাঁর দলের শান্তি ফেরান, আমাদেরটা আমরা বুঝে নেব। বাকিটা বাংলার মানুষ দেখবে। আমাদের সভায় লোক হয়নি— তা হলে তো ওঁদের ভাল। ওঁরা এটা নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুক না।’’
বাঙালিদের মন জয় করার উদ্দেশ্যে প্রায়ই জনসভা থেকে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতারা বাংলায় কথা বলতে শোনা গিয়েছে। অনেক সময় উচ্চারণে ভুল হয় বলেও তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে বিজেপি নেতাদের চ্যালেঞ্জ করেন অভিষেক। চৌরাস্তা মোড়ের বক্তৃতায় বিজেপি নেতাদের বহিরাগত তকমা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী, জেপি নড্ডা, নিতিন গড়কড়ী, অমিত, যোগী-সহ বিজেপি-র দিল্লির নেতারা কাগজ না দেখে বাংলায় ২ মিনিট বক্তৃতা করতে পারলে আগামী নির্বাচন থেকে তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ রইল।’’