আলাপচারিচায় মগ্ন বর্ধমান উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাধাকান্ত রায় এবং তৃণমূলের নিশীথ মালিক (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ। হানাহানি-মারামারি। চারদিকে যেন যুদ্ধের দাদামা। নীলবাড়ির লড়াইতে রাজনৈতিক জমি দখলের জন্য এ সবেরই সাক্ষী বাংলা। তবে এরই ফাঁকে দেখা গেল এক টুকরো অন্য ছবিও। বর্ধমান জেলায় নিজেদের কেন্দ্রে ভোট মিটতেই সৌজন্য বিনিময় করলেন শাসক এবং বিরোধী পক্ষের দুই প্রার্থী— তৃণমূলের নিশীথ মালিক এবং বিজেপি-র রাধাকান্ত রায়। সেই সঙ্গেই যেন বহু পুরনো এক ‘বার্তা’ বয়ে আনলেন, মতের অমিল থাকলেও শত্রু নন প্রতিপক্ষ!
শনিবার পঞ্চম দফায় রাজ্যের ৬ জেলার মোট ৪৫টি কেন্দ্রে ভোট মিটেছে। ওই ৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে বর্ধমান উত্তর কেন্দ্রেরও ভোটগ্রহণ হয়েছে। রবিবার ওই কেন্দ্রেরই যুযুধান দুই প্রার্থী একসঙ্গে বসে আলাপচারিতায় মেতে উঠলেন। ফুটে উঠল রাজনৈতিক সৌজন্যের ছবি।
রবিবার ডিসিআরসি-তে হঠাৎই মুখোমুখি হলেন রাধাকান্ত এবং নিশীথ। দেখা হতেই একে অপরের প্রতি সৌজন্য বিনিময় করেন তাঁরা। গল্পগাছার ফাঁকেই একসঙ্গে বসে চা-পানও করেন। ঘটনাচক্রে, দু’জনেই পূর্বপরিচিত। একই পেশায় রয়েছেন। দু’জনেই প্রাথমিক শিক্ষক। নিশীথ সদর পূর্বচক্রের নান্দুর বিবেকানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন। অন্য দিকে, সাতগেছিয়া পশ্চিম চক্রের আউসা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষক রাধাকান্ত। আবার দু’জনেরই বাড়ি বর্ধমান সদরে। রাধাকান্তের হীরাগাছি এবং নিশীথের হাটগোবিন্দপুরে।
তবে রবিবারের আগে পর্যন্ত একে অপরকে এক ইঞ্চিও রাজনৈতিক জমি ছাড়েননি দু’জন। ভোটপ্রচারে নিজের নিজের দলের তরফে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণও করেছেন। শনিবারও বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের মধ্যে মতের সংঘাত হয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে নিশানা শানিয়েছেন। কিন্তু রবিবারের এক অবেলায় তাঁদের মধ্যে সৌজন্যের হাসি দেখে সকলেই কার্যত হতবাক। তবে এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই বলে জানিয়েছেন রাধাকান্ত এবং নিশীথ— দু’জনেই। রাধাকান্ত বলেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ব্যাপারটা আলাদা। লড়াইটা তো নীতির। ফলে আমরা কেউ কারও শত্রু নই।” প্রায় একই মত নিশীথের। তিনি বলেন, “আমরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারি। কিন্তু শত্রু তো নই!”