বাগদায় অভিযানের সময় পিস্তল হাতে এক পুলিশকর্মী। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, বাগদার গুলি চালানোর ঘটনাকে তিনি কোনও ভাবেই সমর্থন করেন না। শুক্রবার দুর্গাপুর থেকে মমতা যখন সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা বলছেন, তখন বনগাঁ আদালতে দাঁড়িয়ে বাগদা থানার এক সাব ইনস্পেকটর হুমকি দিলেন, “গুলি চালিয়েছি, বেশ করেছি। দরকার হলে কোর্টের মধ্যেও চালাব। আপনারা যা করার করে নিন।” আদালতে হাজির আইনজীবীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার সময় ওই পুলিশ কর্মী শুক্রবার এমন মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ সরকারি আইনজীবীর।
বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা বিধানসভার রণঘাটে ভোটচলাকালীন গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। পরে নির্বাচন কমিশন মেনে নেয় গুলি চলার কথা। রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জগমোহন জানিয়েছিলেন, জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় পুলিশ ৩ রাউন্ড গুলি চালায়। পুলিশের উপর আক্রমণের ঘটনায় ৫ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে বাগদা থানার পুলিশ। তাঁদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার জন্য এই মামলার তদন্তকারী অফিসার আসাদুর রহমান শুক্রবার বনগাঁর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম)-এর আদালতে বিচারক দেবাশিস সাঁতরার এজলাসে হাজির হন। শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। সে সময়ই আসাদুর ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেন বলে আইনজীবীদের দাবি।
এক আইনজীবী আশিস সরকার বলেন, “বাগদায় নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে। সেই পরিবারেরই ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমদের এক আইনজীবী আসাদুর রহমানকে প্রশ্ন করলে উনি বলেন, গুলি চালিয়েছি, বেশি করেছি। শুধু তা-ই নয়। আমাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ এবং গালিগালাজও করেছেন।”
আসাদুরের মন্তব্যের পরই আইনজীবীরা প্রতিবাদ শুরু করেন। ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে পিটিশন দাখিল করেন তাঁরা। এর পর আসাদুরের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করার নির্দেশ দেন বিচারক। পরে আসাদুরকে ১ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়। একইসঙ্গে মামলাটি ‘ডিএম কোর্ট’-এ স্থানান্তরিত করা হয়।
বাগদায় গুলি-কাণ্ড নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুরে শুক্রবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “আমি স্ট্রেট বলেছি, যারা গুলি চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। এবং অ্যাকশন হবে। গুলি চালানোকে আমরা সাপোর্ট করি না। সে যে-ই হোক। আর কিছু কিছু লোক দেখছি ইদানীং সেন্ট্রাল ফোর্সের কথায় নেচে গিয়ে একেবারে এখানেও গুলি চালানো শুরু করে দিয়েছে। যে হেতু ইলেকশন কমিশনের আন্ডারে, ভাবছে, চিরদিনই তারা থাকবে। তাদের আমি বলব, আগুন নিয়ে কেউ খেলা করবেন না। মানুষকে মারবেন না। মানুষকে তার ভোট দিতে দিন।”
যদিও গোটা ঘটনা নিয়ে নীরব পুলিশ। বনগাঁ পুলিশ জেলার এসপি তরুণ হালদারকে বার বার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি।
(ভিডিয়োয় ‘সমীর দাস’ নামে যে আইনজীবীর বক্তব্য দেখানো হয়েছে তাঁর নাম তাপস বিশ্বাস। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত।)