প্রিয়ঙ্কা বঢরা ফাইল চিত্র।
বাম-কংগ্রেস জোটে ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে এ বার মুখ খুললেন কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা বঢরা। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে ধর্মগুরু আব্বাসের দলের সঙ্গে জোট বেঁধে কংগ্রেস তার ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সঙ্গে আপস করছে বলে দলের অন্দরে অভিযোগ উঠেছে ইতিমধ্যেই। এ প্রসঙ্গে প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘কোনও জোটের শরিকরা কখনও সব বিষয়ে একশো শতাংশ একমত হতে পারে না।’’
আব্বাস-বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী ইতিমধ্যেই জবাব দিয়েছেন বলেও জানান প্রিয়ঙ্কা। প্রশ্নকর্তাকে তিনি বলেন, ‘‘আপনি সম্ভবত সোমবারের মন্তব্যের বিষয়ে কিছু জানতে চাইছেন। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সেই মন্তব্যের উত্তর দিয়েছেন।’’
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম রাজ্য অসমেও বিধানসভা ভোট হতে চলেছে। ওই রাজ্যে কংগ্রেসের প্রচারের অন্যতম মুখ প্রিয়ঙ্কা। ঘটনাচক্রে, পশ্চিমবঙ্গে আব্বাসের ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের মতোই অসমে সাংসদ বদরুদ্দিরন আজমলের দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)-এর সঙ্গে কংগ্রেসের জোট নিয়েও দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, বদরুদ্দিরন এবং তাঁর দলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করার অভিযোগ রয়েছে।
অসমের প্রসঙ্গে প্রিয়ঙ্কার মন্তব্য, ‘‘আমরা একসঙ্গে লড়াই করছি কারণ, আজ সকলেই বুঝতে পারছে এটি অসমকে বাঁচানোর লড়াই।’’ তাঁর দাবি, অসমের বিধানসভা ভোটে লড়াই কংগ্রেস বনাম বিজেপি-র নয়, অসমীয়া জাতিসত্তা বনাম আরএসএস-এর মতাদর্শের। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হলে অসমের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ সঙ্কটে পড়বেন বলেও অভিযোগ করেন প্রিয়ঙ্কা।
গত রবিবার ব্রিগেডে বাম-কংগ্রেস সমাবেশে আব্বাসের উপস্থিতির পরেই কংগ্রেসের জাতীয় স্তরের নেতাদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দল কী ভাবে একটি ‘মৌলবাদী শক্তি’র সঙ্গে হাত মেলাল, তা নিয়ে সরব হন তাঁরা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বর্তমানে ‘বিক্ষুব্ধ’ হিসেব পরিচিত আনন্দ শর্মা টুইটার লেখেন, ‘আইএসএফ-এর মতো শক্তির সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা নেহরু-গাঁধীর ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনার সঙ্গে মেলে না। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস কখনও বাছ-বিচার করতে পারে না’। তাঁর সংযোজন, ‘ওই মঞ্চে বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির উপস্থিতি ও সমর্থন বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক! তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত’।
সোমবার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে বামেদের সঙ্গে জোটের বৈঠকের পর আনন্দের ওই মন্তব্যের জবাব দেন অধীর। ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’র সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ উড়িয়ে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা বলেন, ‘‘এই মন্তব্য বেদনাদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক! সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, বিমান বসুরা সকলেই মঞ্চে ছিলেন। তাঁরা সকলে ‘মৌলবাদী শক্তি’র হাত ধরলেন, এমন ধারণা কী করে হল, ভাবতে অদ্ভুত লাগছে।’’
পাশাপাশি, আইএসএফ-এর সঙ্গে সমঝোতা প্রসঙ্গে অধীরের ব্যাখ্যা, ‘‘কংগ্রেস তার দাবি মতো জোটের কাছ থেকে ৯২টি আসনই পেয়েছে। আইএসএফ-কে আসন ছাড়ছে বামেরা।’’ এই পরিস্থিতিতে প্রিয়ঙ্কার মঙ্গলবারের মন্তব্যের ‘নিশানা’ আনন্দ-সহ দলের বিক্ষুব্ধ নেতারা বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।