West Bengal Polls 2021

‘মৌলবাদী’র হাত ধরিনি, ব্যাখ্যা বিমান-অধীরের

বাম নেতাদের একাংশ মানছেন, ব্রিগেডের সমাবেশে তাঁদের তরফে একটা ‘ভুল’ও ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২১ ০৭:০১
Share:

—ফাইল চিত্র।

ব্রিগেডে জোটের মঞ্চে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) উপস্থিতির পরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। নানা মহল থেকে শুরু হয়েছে সমালোচনা। প্রশ্ন উঠেছে, বাম ও কংগ্রেস কেন ‘মৌলবাদী শক্তি’র সঙ্গে হাত মেলাল? কংগ্রেসের অন্দরেও আনন্দ শর্মার মতো নেতা এই জোটের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছেন। সেই সমালোচনার জবাব দিতে এ বার আসরে নামলেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের পাল্টা যুক্তি, মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে গাঁটছড়ার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।

Advertisement

বিধান ভবনে সোমবার সিপিএম ও কংগ্রেসের বৈঠকের পরে এই সংক্রান্ত বৈঠকের পরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘যাঁরা এই সমালোচনা করছেন, তাঁরা সম্যক ভাবে না জেনেই বলছেন। আইএসএফ শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব করছে, এমন নয়। যদি সেই ভাবে পরিচয় দেখতেই হয়, তা হলে বলতে হয়, তারা তফসিলি জাতি, জনজাতি, দলিত বা সাধারণ প্রার্থীও দেবে। তার জন্য প্রার্থী তালিকা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘স্বাধীনতার সময় বা তার পর থেকে বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন যে ভাবে চলেছে, তার সঙ্গে আইএসএফের ভাবনা বা পথ এক ও অভিন্ন নয়।’’

তবে বাম নেতাদের একাংশ মানছেন, ব্রিগেডের সমাবেশে তাঁদের তরফে একটা ‘ভুল’ও ছিল। ওই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আইএসএফের সভাপতি শিমুল সোরেন। তাঁকে বক্তৃতা করার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। এক বাম নেতার কথায়, ‘‘এত জন বক্তা ব্রিগেডে বক্তৃতা করলেন, সেখানে শিমুলের মতো কাউকে সুযোগ দেওয়াই যেত। তা হলে আব্বাস সিদ্দিকিকে দেখে যে শুধু সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্বের ধারণা তৈরি হয়েছে, সেটা অনেকটা কাটানো যেত। সমাবেশ চলাকালীন এটা মাথায় আসেনি!’’

Advertisement

কংগ্রেস নেতা আনন্দ এ দিনই মন্তব্য করেছেন, আইএসএফের মতো শক্তির সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা নেহরু-গাঁধীর ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার সঙ্গে খাপ খায় না। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস কখনও বাছ-বিচার করতে পারে না। তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘ওই মঞ্চে বাংলার প্রদেশ কংগ্রে সভাপতির উপস্থিতি ও সমর্থন বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক! তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত।’’

পত্রপাঠ এই মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁরও সাফ কথা, ‘‘এই মন্তব্য বেদনাদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক! সংযুক্ত মোর্চা গড়ে ওঠায় বাংলায় যাদের অসুবিধা হচ্ছে, তাঁদের কেউ হয়তো ওঁকে বিভ্রান্ত করে থাকতে পারেন। সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, বিমান বসুরা সকলেই মঞ্চে ছিলেন। তাঁরা সবাই মৌলবাদী শক্তির হাত ধরলেন, এমন ধারণা কী করে হল, ভাবতে অদ্ভুত লাগছে। যাদের বিরুদ্ধে আনন্দ শর্মাদের বলা উচিত, তাদের বিরুদ্ধে না বলে উনি নিশানা করছেন তাদের, যারা মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে!’’ কমিউনিস্টদের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করে অধীরবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘কী ভাবে চলতে হবে, সেটা কোনও ব্যক্তির বিষয় নয়। এআইসিসি-র সঙ্গে কথা বলে প্রদেশ কংগ্রেস পথ ঠিক করে এবং বাংলায় আমরা সেটাই করছি।’’

আনন্দের মন্তব্য প্রসঙ্গে বাংলায় এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক জিতিন প্রসাদও বলেছেন, ‘‘দল ও কর্মীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই জোটের সিদ্ধান্ত হয়। এখন ভোট-মুখী রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করাই সকলের কাজ হওয়া উচিত।’’

প্রসঙ্গত, ব্রিগেডের অবসরেই রবিবার আব্বাসদের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছিলেন ছত্তীশগঢ়ের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এবং জিতিন। তাঁদের কথা হয়েছিল সিপিএমের ইয়েচুরি ও মহম্মদ সেলিমের সঙ্গেও। এআইসিসি-র বার্তা নিয়েই ত্রিপাক্ষিক জোটের প্রক্রিয়ায় এ দিন এগিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement