ভোট শেষেই সংঘর্ষে অশান্ত পাণ্ডবেশ্বর

ভোটের দিন দফায়-দফায় সংঘর্ষ হয়েছিল জামুড়িয়ায়। বিক্ষিপ্ত গোলমাল দেখেছিল অন্য নানা এলাকা। কিন্তু ভোট মিটতে একের পর এক গোলমাল বাধল শিল্পাঞ্চল জুড়ে। সবচেয়ে বেশি অশান্ত হল পাণ্ডবেশ্বর।

Advertisement

সুব্রত সীট

পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০০
Share:

রাতে হামলার পরে মঙ্গলবার সকালে মাধাইপুরে লাঠি হাতে মিছিল গ্রামবাসীদের।

ভোটের দিন দফায়-দফায় সংঘর্ষ হয়েছিল জামুড়িয়ায়। বিক্ষিপ্ত গোলমাল দেখেছিল অন্য নানা এলাকা। কিন্তু ভোট মিটতে একের পর এক গোলমাল বাধল শিল্পাঞ্চল জুড়ে। সবচেয়ে বেশি অশান্ত হল পাণ্ডবেশ্বর।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত সোমবার ভোট শেষে। অভিযোগ, রাতেই হামলা হয় পাণ্ডবেশ্বর কেন্দ্রের লস্করবাঁধে সিপিএম কর্মী দুর্যোধন বাগদির উপরে। মারধর করা হয় তাঁকে। এর পরে ভাঙচুর হয় আর এক সিপিএম কর্মী অমর রুইদাস এবং বনগ্রামে শ্রীধর রুইদাসের বাড়িতে। হামলাকারীরা মাধাইপুরে গেলে সেখানে সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। দুষ্কৃতীরা পালায়। দুর্যোধনবাবুকে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঘটনার প্রতিবাদে এলাকায় সিপিএম মিছিল করে মঙ্গলবার সকালে। হাতে লাঠি, তির-ধনুক নিয়ে মিছিল হওয়ায় পুলিশ গিয়ে তা বন্ধ করে দেয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেলে আবার পরিস্থিতি বদলে যায়। নতুনডাঙায় সিপিএম সমর্থক শান্তি রুইদাসের বাড়িতে হামলা হয়। বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। তাঁর স্ত্রী ছায়াদেবীর অভিযোগ, ‘‘সিপিএম করার জন্য আমাদের উপরে হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা হুমকিও দিয়ে গিয়েছে।’’ মাধাইপুরে আবার সিপিএম সমর্থক শিশির বাগদিকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। জখম অবস্থায় রাস্তায় বেশ কিছুক্ষণ পড়েছিলেন তিনি। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। সিপিএম সমর্থক মধু রুইদাসের মোটরবাইক মাটিতে ফেলে ভাঙচুর করা হয়। পাশিউলির অভিলাল বাউড়ির বাড়িতে ভাঙচুর হয়। সন্ধ্যার ঠিক আগে আবার ওই গ্রামেরই তৃণমূল সমর্থক ভোলারাম বাউড়ির বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

পানশিউলিতে লণ্ডভণ্ড বাড়ি।

এ দিন সন্ধ্যার মুখে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পরিবেশ থমথমে। পুলিশের গাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ মুখ খুলছেন না। সবাই সন্ত্রস্ত। মাধাইপুর, লস্করবাঁধ, নতুনডাঙায় টহল দিচ্ছে পুলিশের গাড়ি। পানশিউলির অভিলাল বাউড়ির বাড়ির উঠোনে পড়ে রয়েছে সাইকেল, কড়াই-সহ যাবতীয় আসবাবপত্র। বাড়িতে কেউ নেই। ওই গ্রামেরই শেষ প্রান্তে ঝোপজঙ্গলের ভিতর থেকে অন্ধকারেই মাঝে-মাঝে হইহল্লার আওয়াজ ভেসে আসছে। পুলিশ সে দিকে গেলে সব থেমে যাচ্ছে। মহিলারা বাড়ির বাইরে কেউ বেরোননি। পুরুষেরা মুখ খুললে বাড়ির ভিতর থেকে মহিলারা চুপ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবু তারই মধ্যে কেউ-কেউ জানালেন, ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে এক বার গ্রামের একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এক বার রাজনৈতিক গোলমাল হয়েছিল। তার পরে পরিবেশ শান্ত ছিল। এ দিন ফের অশান্ত হয়ে ওঠে গ্রাম। ওই গ্রামেরই ভোলারাম বাউড়ির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কেউ নেই। রান্নাঘরের জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে রয়েছে। উঠোনে পড়ে আছে ইট, মাছ ধরার ছোট জাল। গ্রামের কয়েক জন জানালেন, ওই পরিবার তৃণমূল সমর্থক হিসেবে পরিচিত। সিপিএমের লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও সিপিএম অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে তৃণমূলের লোকজন নিজেরাই এমন ভাবে ঘটনা সাজিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় আগে থেকে পরিস্থিতি আঁচ করে ভোটের দিন এই এলাকার বিভিন্ন বুথে ঘুরে বেরিয়েছেন। কার্যত নির্বিঘ্নে ভোট মিটেছে। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল ছাপ্পা দেওয়ার ছক কষেছিল। কিন্তু সব বুথে এজেন্ট দিতে পারায় এবং দিনভর সিপিএম নেতারা এলাকায় ঘোরাফেরা করায় তা বানচাল হয়ে যায়। সেই রাগেই রাত থেকেই শুরু হয় হামলা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছে সিপিএম। যদিও এসিপি সুব্রত দেব বলেন, ‘‘গোলমালের খবর পেয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এলাকায় টহল দেওয়া হচ্ছে।’’

এর মধ্যেই আশার আলো দেখছেন সিপিএম নেতারা। পানশিউলি গ্রামে এক তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ স্বীকার না করলেও সোমবার রাতে যে ভাবে মাধাইপুরে দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রতিরোধের মুখে পিছু হঠে হামলাকারীরা, তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা। দলের জেলা কমিটির সদস্য শিশির ঘোষের কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ পুলিশের ভরসায় বসে না থেকে প্রতিরোধের পথ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কাজ হচ্ছে। এ ভাবেই হামলাকারীদের রুখতে হবে।’’ তৃণমূলের ফরিদপুর ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘মানুষ ঢেলে ভোট দিয়েছেন। তা দেখে ভয় পেয়েছে সিপিএম। তাই আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা শুরু হয়েছে।’’

ভোট মেটার পরে গোলমাল হয় রানিগঞ্জের এগারাতেও। প্রয়াত তৃণমূল নেতা সেনাপতি মণ্ডলের বাড়িতে বিজেপি হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বিজেপির অবশ্য পাল্টা দাবি, জনসমর্থন হারিয়ে মিথ্যে অভিযোগ করছে তৃণমূল।

ছবি: বিকাশ মশান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement