ভোট মিটে গিয়েছে। কিন্তু উত্তেজনার আঁচ জ্বলছে ধিকিধিকি করে। তার জেরে রাজনৈতিক দল থেকে প্রশাসন কোনও পক্ষই স্বস্তিতে নেই।
এই অবস্থায় আজ, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টেয় কল্যাণী মহকুমাশাসকের অফিসে সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছে। মহকুমাশাসক স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। সব রাজনৈতিক দলকেই তা থামানোর দায়িত্ব নিতে হবে।’’
চতুর্থ দফার ভোট পর্যন্ত রাজ্যের যে ক’টি এলাকায় সবচেয়ে বেশি মারপিট-আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, তার অন্যতম কল্যাণী, হরিণঘাটা ও চাকদহের বিভিন্ন এলাকা। ভোটের আগে থেকেই যার শুরু, ভোট মিটে যাওয়ার পরেও তার জল গড়াচ্ছে। কখনও কখনও পরিস্থিতি পুলিশ-প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যাচ্ছে। ঠিক যেমন গিয়েছিল হরিণঘাটায় কংগ্রেস নেতা সুকুর আলি মণ্ডলের বাড়িঘর পোড়ানোর ঘটনায়।
সিপিএম প্রার্থীর এজেন্ট হওয়ার ‘অপরাধে’ ভোট মিটে যাওয়ার পরে রাতে সুকুর আলির ঘর পোড়ানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় যে দুই তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, বুধবারই কল্যাণী আদালত তাদের জামিন নাকচ করে দিয়েছে। কিন্তু সুকুর আলি এখনও তৃণমূলের ভয়ে গ্রামে ফিরতে পারছেন না।
এ দিন জামিন পেয়েছেন সুকুর নিজেও। যে রাতে তাঁর বাড়ি পুড়ল, তার পরের দিন হরিণঘাটা থানার সামনে বিক্ষোভে চলাকালীন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে মার খান হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা নদিয়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চল দেবনাথ। সেই অভিযোগে সুকুরের নাম ছিল। যেমন ছিল সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বঙ্কিম ঘোষ-সহ আরও বেশ কয়েক জনের নাম। তাঁরাও এ দিন জামিন পেয়েছেন।
চঞ্চলকে মারধরের অভিযোগে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকেই ২১ জন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল। সুজয় দত্ত নামে এক সিপিএম কর্মী ছাড়া বাকিরা পরের দিনই জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন। সুজয়ও এ দিন জামিন পেয়ে গিয়েছেন।
এ দিন বিচারক বিবেকানন্দ সুরের এজলাসে আত্মসমর্পণ করেন বঙ্কিম ঘোষ, সিপিএমের হরিণঘাটা জোনাল সম্পাদক হেমন্ত ভৌমিক, জেলা পরিষদ সদস্য নারায়ণ দাস, হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি শঙ্কর দেবনাথ, হরিণঘাটা জোনাল সদস্য খয়ের মণ্ডল ও অসীম বিশ্বাস। বিচারক জামিন মঞ্জুর করে আগামী ৭ মে শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন। বঙ্কিম ঘোষদের দাবি, তৃণমূল নেতাকে মারধরের ঘটনায় তাঁরা কোনও ভাবেই জড়িত নন। তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে।
ভোটের আগে থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে জোটের গণ্ডগোল চলছিল হরিণঘাটায়। ভোটের দিন তৃণমূলের ‘দাদাগিরি’ও রুখে দেন জোটের কর্মীরা। সিপিএমের অভিযোগ, সেই রাগে ভোট মিটতেই তৃণমূল ‘বদলা’ নিতে নেমে পড়ে। আগুন লাগানো হয় সুকুর আলির বাড়িতে।
পরের দিন থানায় বিক্ষোভের পরে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক ননী মালাকারের বাড়িতে ঢুকে অভিযোগ লিখছিলেন বঙ্কিমবাবুরা। তৃণমূলের লোকজন সেখানে ঢুকে তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় ছয় তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁরাও এ দিন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
আদালত থেকে বেরিয়ে সুকুর আলি বলেন, ‘‘আমার সর্বস্ব গিয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। তা সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে ওরা মারধরের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছিল।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের লোকেরা এখনও সমানে হুমকি দিয়ে যাওয়ায় তিনি গ্রামে ফিরতে পারছেন না। স্ত্রী-পু্ত্র নিয়ে তাঁকে অন্যের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। চঞ্চলবাবু অবশ্য হুমকির অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তাঁর দাবি, ‘‘এ সব বানানো কথা। আমাদের কর্মীরা রীতিমতো শান্ত রয়েছে। বরং ওদের তরফ থেকেই প্ররোচনা রয়েছে।’’
বঙ্কিমবাবুদের মারধরের ঘটনায় চঞ্চল দেবনাথের বিরুদ্ধেও ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ রয়েছে। তিনি আদালতে আত্মসমর্পণও করেননি, জামিনও নেননি। কেন? চঞ্চলবাবু জানান, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।