এ বারের তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন বিধায়কের নাম লেখা ছিল অ্যাম্বুল্যান্সের গায়ে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ ছিল, ওই নাম ঢেকে বা দিয়ে মুছে অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে হবে। তা না করে পরিবর্তে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাই বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল প্রাক্তন বিধায়ক তথা এ বার আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার লোকজনের বিরুদ্ধে। এমনকী যাঁদের হাতে অ্যাম্বুল্যান্সটি খাতায় কলমে তুলে দেওয়া হয়েছিল সেই আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতিকেও এ বিষয়ে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ।
দিন কুড়ি ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকায় জরুরি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। হাসপাতালের সুপার শান্তনু নন্দী বলেন, “ বিধায়ক তহবিলের অ্যাম্বুল্যান্সটি নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। কারণ অ্যাম্বুল্যান্সটি নামকাওয়াস্তে রোগীকল্যাণ সমিতিকে দেওয়া হলেও প্রথম থেকেই বিধায়ক নিজের নিয়ন্ত্রণেই সেটি রেখেছেন।”
কী বলছেন বিধায়ক তথা প্রার্থী?
কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “ভোট ঘোষণার পরেই আমার নাম লেখা অ্যাম্বুল্যান্সটি চালাতে নিষেধ করে মহকুমা প্রশাসন তথা নির্বাচন কমিশন। সেই কারণেই গাড়িটি আপাতত সরিয়ে রাখা হয়েছে।”
অ্যাম্বুল্যান্সের গায়ে ‘বিধায়ক তহবিলের’ লিখলেই তো চলতো। মমত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নিজের নামটা লিখতে হল কেন? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে কৃষ্ণচন্দ্রবাবু বলেন, “সোমবারই (আজ) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সটি ফের চালানোর ব্যবস্থা করব।”
এমন অভিযোগও উঠেছে, তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় থেকে অ্যাম্বুল্যান্সটি পরিচালনা করা হতো। কম ভাড়ায় দুঃস্থ রোগীদের পরিষেবায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। দলীয় লোকজন ছাড়া অন্যত্র ব্যবসায়িক ভিত্তিতেই ভাড়া দেওয়া হতো। যদিও এ সব অভিযোগ মানতে চাননি বিধায়ক। তাঁর দাবি, “বহু দুঃস্থ রোগীকে আরামবাগ থেকে কলকাতায় বিনা পয়সায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর অ্যাম্বুল্যান্সটির তদারকি ও সুষ্ঠু পরিচালনার জন্যই সেটি নিজেদের (দলের) নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।”
আরামবাগের মহকুমা শাসক তথা রিটার্নিং অফিসার প্রতুল কুমার বসু বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে পরিষেবা বন্ধের কথা বলা হয়নি। খালি ওই সরকারি সম্পত্তির উপর থেকে প্রার্থীর নামটা ঢাকতে বা মুছে দিতে বলা হয়েছিল। অ্যাম্বুল্যান্সটি কি অবস্থায়, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২০১৩ সালে বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় কেনা অ্যাম্বুল্যান্সটি হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু দিন কয়েক পরেই বিধায়ক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান, অ্যাম্বুল্যান্সটির নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তিনিই নেবেন। তারপর থেকেই রোগীকল্যাণ সমিতি আর অ্যাম্বুল্যান্সটি নিয়ে মাথা ঘামায়নি।