কুনুর নদীর এই চরে গণধর্ষণ হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।
নাতনির অসুখের নাম করে মেলা থেকে শাশুড়িকে ডেকে এনে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে জামাই ও তার দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে। আউশগ্রামের বছর ছেচল্লিশের ওই মহিলার অভিযোগ, ঘটনার পরে কোনও রকমে জঙ্গলের ভিতরের পথ দিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার নির্যাতিতাকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধৃত অমরপুরের বাসিন্দা সজল বাউরি, গৌর বাগদি এবং আদুড়িয়ার বাসিন্দা বাবু বাগদিকে এ দিন আদালতে তোলা হলে চার দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়।
দিন দশেক আগেও আউশগ্রামের শোকডাঙায় এক কিশোরীকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার নাম করে সাইকেলে চাপিয়ে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে পাড়ারই চার যুবকের বিরুদ্ধে। ভোটের মাঝে পরপর এই ধরনের ঘটনায় বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন মহিলাদের নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি। বারবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গেও।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে আউশগ্রামের দেবশালা পঞ্চায়েতের ভাতকুণ্ডা গ্রামের ওই মহিলার ছোট মেয়ের বিয়ে হয় অমরপুরের এক বাসিন্দার সঙ্গে। নির্যাতিতার অভিযোগ, সোমবার রাতে কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে পাশের গ্রাম পড়িষার মেলায় বাউল গান শুনতে গিয়েছিলেন তিনি। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ জামাই এসে নাতনির শরীর খারাপ জানিয়ে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চায় তাঁকে। জামাই ও তাঁর এক বন্ধু বাবু বাগদির সঙ্গে মোটরবাইকে চাপেন ওই মহিলা। অভিযোগ, আদুরিয়ার বদলে রাঙাখুলার কাছে কুনুর নদীর চরে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল জামাইয়ের আর এক বন্ধু গৌর বাউরি। মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রত্যেকেই মত্ত অবস্থায় ছিল। তাঁকে মারধর করে, প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পরপর ধর্ষণ করে তারা। ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতও করা হয় বলে অভিযোগ। জ্ঞান হারান তিনি। পরে জ্ঞান ফিরলে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পালান।
মঙ্গলবার ঘটনার কথা জানিয়ে আউশগ্রাম থানায় অভিযোগ করেন তিনি। পুলিশের দাবি, জোর করে ভয় দেখিয়ে গণধর্ষণ এবং প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে। ধৃতেরা জেরায় তাদের কাছে ধর্ষণের কথা মেনে নিয়েছে বলেও পুলিশের দাবি। শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে মায়ের কাছে এসেছেন নির্যাতিতার ছোট মেয়ে। স্বামীর উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আউশগ্রামের বিজেপি প্রার্থী কলিতা মাঝির দাবি, ‘‘তৃণমূলের আমলে কোনও মহিলার নিরাপত্তা নেই। মহিলা প্রার্থী হিসেবে এই ঘটনায় লজ্জিত।’’ সংযুক্ত মোর্চার নন্দীগ্রামের প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও এ দিন গুসকরা সভা করেন। সেখানে তাঁর অভিযোগ, “মা, বোনেদের সম্মানের দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। টাকা দেওয়া হচ্ছে। এটা সরকার? আমরা এমন সরকার চাই, যে নিরাপত্তা দেবে।’’ তৃণমূল প্রার্থী অভেদানন্দ থান্দারের দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব রকম ভাবে মা-বোনেদের পাশে আছেন। এ ধরনের অপরাধ মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’