পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায় সভা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই গরম হচ্ছে বাংলার ভোট বাজার। সোমবার এক দিকে যখন রানিবাঁধের সভায় দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অন্য দিকে তখনই পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ও চন্দ্রকোণায় ২টি সভা করে বিজেপি-কে আক্রমণ করলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, ‘আমার খেলা ২ তারিখের পরে শুরু হবে’।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে থেকেই তৃণমূলের স্লোগান 'খেলা হবে'। এই একই স্লোগান শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যেও। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহত হওয়ার পরে শাসক দলের নতুন স্লোগান ‘ভাঙা পায়েই খেলা হবে’। সেই খেলা হবে স্লোগানই ফের অভিষেকের মুখে শোনা গেল। তবে খানিকটা আলাদা। তাঁর খেলা ২ তারিখের পরে শুরু হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।
২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা। তৃণমূল বারবার দাবি করছে এবার আরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে তারা। আর ক্ষমতায় আসার পরে বহিরাগতদের রাজ্য ছাড়া করা হবে। অভিষেকের এই মন্তব্যের পরে রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, ২ তারিখের পরে খেলা শুরু হওয়ার কথা বলে হয়তো সেই দাবিকেই আরও খানিকটা চাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন অভিষেক।
সোমবার চন্দ্রকোণার সভা থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করেন তৃণমূল সাংসদ। সম্প্রতি আমদাবাদের মোতেরায় সর্দার বল্লভভাই পটেল স্টেডিয়ামের নামকরণ হয়েছে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক দিন ধরেই সমালোচনা করছে্ন বিরোধীরা। চন্দ্রকোণায় দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন, “বিজেপি-কে ভোট দেওয়া আর খাল কেটে কুমির আনা এক। সর্দার বল্লভভাই পটেলের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামের নাম পাল্টে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। বিজেপি ক্ষমতায় এলে মেদিনীপুরের নাম পাল্টে এরা করবে মোদীনীপুর।”
নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিন থেকেই বিজেপি দাবি করছে, বাংলায় ২০০-র বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে তারা। সেই দাবিকেও কটাক্ষ করেন অভিষেক। বলেন, “বিজেপি বলছে, ২০০ সিট পাবে। আগে ২০০ বুথে জিতে দেখাও। তার পরে আসন জিতবে।”
কিছুদিন আগে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঘাত পাওয়ার ঘটনায় বিজেপি-র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। সেই অভিযোগ আরও এক বার এ দিন শোনা যায় অভিষেকের গলায়। এ ভাবে আঘাত করে যে তাঁদের আটকানো যাবে না, সেটাও স্পষ্ট করে দেন তিনি। অভিষেক বলেন, “এক জন মহিলার উপর আঘাত হানতে গিয়ে একটি দল ধ্বংস হয়ে যাবে। মহিলাদের সম্মান দিতে জানে না বিজেপি। জোর করে যেমন মধ্যপ্রদেশ, বিহার দখল করেছে, সে রকম চেষ্টা বাংলাতেও করছে। বলেছিল, পা ভেঙে দেব। ঘরে বসে থাকতে হবে। সিপিএম আটকাতে পারেনি। তোমরা কী ভাবে আটকাবে? আঘাত করে আমাদের আটকানো যাবে না।”
এমনকি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করতে শোনা যায় যুব তৃণমূল সভাপতিকে। বলেন, “নির্বাচন কমিশনও উঠে পড়ে লেগেছে। কী করে তৃণমূল প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।”
প্রচারের প্রথম দিন থেকেই বিজেপি নেতাদের 'বহিরাগত' বলে অভিযোগ করছে তৃণমূল। বহিরাগতদের বাংলা থেকে বিদায় জানানোর আহ্বান জানাচ্ছেন নেতা নেত্রীরা। মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেই আবেদনই ফের এক বার জানালেন অভিষেক।