Lok Sabha Election 2024

বাহুবলের সিন্ডিকেট আয়ে গড়ায় পরিবহণের চাকা! ভোটে বদল হবে কি

সিন্ডিকেটের ব্যবসায় হাতেখড়ির সময়ে ‘প্রণামী’ দিতে হয় নানা জায়গায়। কাছের লোক না বিরোধী, তার উপরেই নির্ভর করে দর।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস ও চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ ০৮:০২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের গিরিশ পার্ক মোড় থেকে গণেশ টকিজ়ের দিকে কোনও গাড়িরই সোজা যাওয়ার উপায় নেই। কলকাতা পুলিশের পথ-নির্দেশিকা বলছে, বহু বছর ধরেই ওই পথ একমুখী। অর্থাৎ, গণেশ টকিজ় থেকে গিরিশ পার্ক মোড়ের দিকে যান চলাচল করবে। কিন্তু দীর্ঘদিনের এই নিয়মেও সম্প্রতি বদল করা হয়েছিল দিনকয়েকের জন্য। একমুখী রাস্তার খানিকটায় গার্ডরেল বসিয়ে দ্বিমুখী করে দিয়েছিল পুলিশ। তবে, তা শুধুমাত্র অটোর জন্য!

Advertisement

অটোর প্রভাব বোঝাতে এই উদাহরণ টেনে কাঁকুড়গাছি-গিরিশ পার্ক রুটের এক অটোচালক বললেন, ‘‘যে পথে যেতাম, সেখানে রাস্তায় কাজ হচ্ছিল। আমরা বেশি ঘুরব কেন? যে দাদা-দিদিদের প্রণামীর খাম পাঠিয়ে খুশি রাখি আমরা, তাঁরাই পুলিশকে বলে ওই বদল ঘটান।’’ ‘প্রণামী খাম’? অটোচালকের মন্তব্য, ‘‘দাদা-দিদিদের প্রতি মাসে খামে ভালবাসা পাঠাই। তার জোরেই সব হয়।’’

এই ‘জোর’ দেখা গিয়েছিল বেশ কিছু দিন আগে, গড়িয়া মোড়ের পাঁচ নম্বর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায়। সে দিন সকাল সকাল রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ওই চত্বর। ভাঙচুরে ক্ষতি হয় সাতটি অটোর। কিছু ক্ষণের মধ্যেই এক দল লোক সেখানে ঢুকে ফুটপাতের দোকান ও ভিতরের সব জিনিস ভাঙতে শুরু করেন। তাণ্ডবের জেরে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকে রাজা এস সি মল্লিক রোড। আহতদের হাসপাতালে পাঠিয়ে আর কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পরিস্থিতি সামলায় পুলিশ। জানা যায়, একটি রাজনৈতিক দলের সৌধের সামনে হকারকে বসতে না দেওয়া নিয়ে গোলমাল শুরু হলেও তা গড়ায় হকার সিন্ডিকেট বনাম অটো সিন্ডিকেটের লড়াইয়ে!

Advertisement

এক সময়ে নির্মাণ ব্যবসা ঘিরে সিন্ডিকেটের জুলুম শুরু হলেও এখন গণপরিবহণের মতো জরুরি বিষয়ও সেই পথেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। নির্বাচনের আগে এখন নেতা-দাদার ‘আশীর্বাদধন্য’ হতে এই সিন্ডিকেট জুলুমই কয়েক গুণ বেড়েছে। এক ভুক্তভোগীর মন্তব্য, ‘‘বিনিয়োগ ছাড়া শুধু বাহুবলে আয় করতে প্রায় সবেতেই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য! নেতা-দাদাদের আশীর্বাদ থাকায় অন্যায় করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন সিন্ডিকেটের মাথারা।’’ অভিযোগ, তাঁরাই ঠিক করছেন, কোন রুটে কতগুলি অটো চলবে, কোথায় ট্যাক্সির স্ট্যান্ড হবে, অথবা দিনের আয়ের কত ভাগ চালক বা মালিক সিন্ডিকেটকে দেবেন। তা হলেই ট্র্যাফিক গার্ডের ঝামেলা সামলাতে হয় না। প্রয়োজন না থাকলেও রুটে অটো নামাতে সমস্যা হয় না।

যাদবপুরের এক অটোচালক বলেন, ‘‘শহর এবং শহরতলির অটোর রুট নথিভুক্ত আছে। চাইলেই নতুন অটো নামানো যায় না। কারণ, রুট-পিছু কত অটো চলছে বা থাকতে পারে, সেই সংখ্যা তালিকাবদ্ধ থাকে। অটো চলার অযোগ্য, এই প্রমাণ দাখিল করা ছাড়াও অটো ধ্বংসের প্রক্রিয়ার ভিডিয়ো জমা দিতে হয়। তার পরেই নতুন অটোর ছাড়পত্র মেলে। কিন্তু সিন্ডিকেটের আশীর্বাদে সব নিয়মই খাতায়কলমে। এই আশীর্বাদ পেতেই সাড়ে চার লক্ষ টাকার অটোর জন্য দশ লক্ষ টাকা খরচ করে তবেই পথে নামাতে হয়।’’ একই ব্যাপার ঘটছে স্ট্যান্ডে নতুন ট্যাক্সি রাখতে গিয়ে। ভাড়া হিসাবে ট্যাক্সি-পিছু ১০০-১৫০ টাকা সিন্ডিকেটের মাথাদের দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

সিন্ডিকেটের আরও একটি বড় চক্র পণ্যবাহী লরি। অভিযোগ, কাগজের প্যাড ছাপিয়ে লরি-পিছু তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার রসিদ কেটে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যাতায়াত। এই প্যাডই শহরে লরির ‘গেট পাস’! এই পাস থাকলে পুলিশ ধরে না। অতিরিক্ত ওজন বহন বা সিগন্যাল ভাঙায় মামলা হয় না। চালক মত্ত কি না, কেউ জানতেও চান না। কাউকে পিষে মারলেও সহজেই আত্মগোপন করতে পারেন লরির চালকেরা। উত্তর কলকাতার লরি ইউনিয়নের সদস্য নিমাই কর্মকারের দাবি, ‘‘মা কালী, মা তারা বা ওঁ লেখা প্যাড ছাপানো হয়। প্যাডের ছায়ায় না এলেই মুশকিল। তখন প্রতি মোড়ে কেস খেতে হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement