গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তিনি নিজে এ বার লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন মুর্শিদাবাদে। বঙ্গ সিপিএমের দ্বিতীয় রাজ্য সম্পাদক হিসাবে ভোটে লড়ছেন তিনি। কিন্তু শূন্য থেকে কি খাতা খুলতে পারবে সিপিএম? এই লোকসভা ভোটে?
আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই মুখোমুখি’-তে মহম্মদ সেলিমের কাছে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এ জবাব পাওয়া গেল না। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বললেন, ‘‘আমার প্লে বুক আমি পার্টিতেও ওপেন করি না। পলিটব্যুরো ছাড়া। তবে এটুকু বলতে পারি যে, বাংলার মানুষ এবং বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের উপর আমার ভরসা রয়েছে। বামফ্রন্ট বাদ দিয়েও কংগ্রেস, আইএসএফ আসবে। তা ছাড়াও তৃণমূল এবং বিজেপির দুর্নীতি এবং বিভাজনের বিরুদ্ধে যে মানুষ রয়েছেন, তাঁরা দেশ রক্ষা করতে, সংবিধান রক্ষা করতে আমাদের সংসদে পাঠাবেন।’’
আর আসন না পেলে? সেলিম কি হতাশ হবেন? সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘আমরা পোড়খাওয়া। তবে হ্যাঁ, যে নতুন অংশের কর্মীরা দলে যুক্ত হচ্ছেন, তাঁদের কথা ভাবলে তো খারাপ লাগে। লাগবে। ক্রিকেটে কোনও দল হারলে তাদের প্লেয়ারদের দেখলে আমার খারাপ লাগে না। কিন্তু প্রথম যাঁরা মাঠে গিয়েছেন বা টিভির সামনে বসে খেলা দেখেছেন, তাঁদের মুখগুলো দেখলে খারাপ লাগে।’’
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় বাংলা থেকে সংসদে গিয়েছিলেন বামেদের ১৫ জন। ২০১৪ সালে সেই সংখ্যা কমে হয় দুই। তাঁদের মধ্যে সেলিম নিজেও ছিলেন। কিন্তু গত লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গে শূন্য হয়ে যায় বামেরা তথা সিপিএম। বঙ্গ সিপিএমে রাজ্য সম্পাদকদের ভোটে দাঁড়ানোর রেওয়াজ ছিল না। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে সেই নজির তৈরি করেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তবে সে বার রাজ্য সম্পাদকের চেয়ারে থেকেও নারায়ণগড় থেকে ভোটে লড়েছিলেন সূর্যকান্ত। তাঁর পরে সেলিম লড়ছেন এ বারের লোকসভায়। সিপিআই ভেঙে ১৯৬৪ সালে সিপিএম তৈরি হয়েছিল। অবিভক্ত পার্টির রাজ্য সম্পাদক হিসেবে পাঁচের দশকের গোড়ায় জ্যোতি বসু ভোটে লড়েছিলেন। কিন্তু সপ্তম কংগ্রেসে পার্টি ভাগ হওয়ার পর তা বাংলায় কখনও হয়নি। অন্য অনেক রাজ্যে হলেও বাংলা ছিল ব্যতিক্রম।
কেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদককেও ভোটের ময়দানে নামতে হল? দলের অবস্থা কি এতটাই ক্ষয়িষ্ণু? সেলিমের জবাব, ‘‘লড়াইটা সামনে থেকে লড়তে হবে বলে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখন মাঠে নেমেই অধিনায়কত্ব করতে হবে। যে সময় এসেছে, তাতে নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন বলে কিছু হয় না।’’ মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার সংখ্যালঘু। নাম মহম্মদ সেলিম বলেই কি তিনি সেই মুর্শিদাবাদে প্রার্থী? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘২০০৪ সালে আমি যখন কলকাতা উত্তর-পূর্বে দাঁড়িয়েছিলাম, তখন একটি পত্রিকা লিখেছিল, মহম্মদ সেলিম কেন কলকাতায়? কেন মালদহ বা মুর্শিদাবাদে নয়? এখন আবার বলা হচ্ছে নাম সেলিম বলেই কি মুর্শিদাবাদ?’’ জয়ের আশা আছে? সেলিমের জবাব, ‘‘আশা আছে বলেই তো পার্টি বলেছে দাঁড়াতে। আরও আশা জাগিয়ে তোলার জন্য।’’