নওশাদ সিদ্দিকি। —নিজস্ব চিত্র।
নওশাদ সিদ্দিকির পরিবার ধর্ম নিয়ে থাকেন। ফুরফুরা শরিফের পিরজাদাদের সব পরিবারই প্রায় তা-ই। কিন্তু তাঁরা মাঝে মাঝে রাজনীতিকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ও করেন। কিন্তু সরাসরি নির্বাচনী রাজনীতি কেউই করতেন না। নওশাদই প্রথম, যিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন। জিতে বিধায়কও হয়েছেন। কিন্তু তিনি কেন এলেন রাজনীতিতে?
আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে নওশাদ জানিয়েছেন, তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীর উত্তরাধিকার বহন করছেন। সেই সঙ্গে এ-ও জানালেন, যে বৈষম্য এবং অব্যবস্থা কায়েম রয়েছে সমাজে, তাকে যদি দূর করতে হয়, তা হলে তা সামাজিক কাজ করে হবে না। তার জন্য প্রয়োজন ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা’।
নওশাদের কথায়, ‘‘ফুরফুরার পির আবু বক্কর সিদ্দিকি রহমতুল্লাহ সাহেব শুধুমাত্র এক জন ধর্মগুরু ছিলেন না। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ চিৎপুরের বড় মসজিদে যে মৌলবির হাতে রাখি বেঁধেছিলেন, তিনি আর কেউ নন, পির আবু বক্কর সিদ্দিকি রহমতুল্লাহ। আমি তাঁর প্রপৌত্র। আমি সেই পরিবার থেকে উঠে এসেছি।’’
কিন্তু সরাসরি রাজনীতি করার ভাবনা যে অনেক দিনের নয়, তা-ও জানিয়েছেন নওশাদ। কবে থেকে? ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘২০১৯ সালে আমপান ঝড়ের পরে আমি এবং ভাইজান (তাঁর দাদা আব্বাস সিদ্দিকি) গিয়েছিলেন দুই চব্বিশ পরগনার উপকূলবর্তী অঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী দিতে। সেই সময়ে দেখেছিলাম মানুষের কী দুরবস্থা। ভাইজান দেখেছিলেন, সাপের সঙ্গে মানুষ একসঙ্গে রয়েছেন। যা তাঁকে খুব কষ্ট দিয়েছিল। সেই সময় থেকে আমাদের চিন্তুাভাবনায় বদল আসতে শুরু করে। আমরা মনে করি, চ্যারিটি করে এই কাজ করা যাবে না। এর জন্য দরকার রাজনৈতিক ক্ষমতা। যার অপব্যবহার না হলে মানুষের দুর্দশা ঘোচানো সম্ভব।’’
নওশাদ বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে বিধায়ক হয়েছিলেন। সেই জোটের পোশাকি নাম ছিল ‘সংযুক্ত মোর্চা’। নওশাদ নিজেও জানিয়েছেন, তিনি নিজেকে ‘সংযুক্ত মোর্চার বিধায়ক’ বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। সেই মোর্চার একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি জিতেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় থেকে। কিন্তু গোড়ার দিকে নওশাদের থেকে আব্বাসকেই লোকে আইএসএফের ‘নেতা’ হিসেবে জানতেন। তবে গত তিন বছরে নওশাদ রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন। আব্বাস প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে খানিকটা অন্তরালে চলে গিয়েছেন। কিন্তু নওশাদের দাদা আব্বাস কি কখনও পরিষদীয় বা নির্বাচনী রাজনীতিতে আসবেন? নওশাদ জানিয়েছেন, তাঁর ভাইজানের এখনও তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই।
২০২১ সালে তাঁদের দল তৈরি হওয়া, বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে সেই দলের জুড়ে যাওয়া বঙ্গ রাজনীতিতে ‘চমক’ তৈরি করেছিল। কিন্তু সেই জোট এই লোকসভা ভোটে আর নেই। বামেদের সঙ্গে কথা এগনোর পরেও আসন সমঝোতা না হওয়ায় আইএসএফ একক ভাবে প্রার্থী দিয়েছে। নওশাদ কি ‘সুযোগসন্ধানী’? তাঁর কথায়, ‘‘অনেকেই অনেক রকম সেটিংয়ের তত্ত্ব বলেন। যাঁরা সেটিং করেন, তাঁরাই সেটিং দেখতে পান। আমি সেটিংও করি না, সুযোগসন্ধানীও নই।’’
নওশাদ আসলে কাদের নেতা? মুসলিমদের না আপামর বাঙালির? ভাঙড়ের বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘আমি সমস্ত অনগ্রসর অংশের মানুষের হয়ে লড়াই করতে চাই। যাঁরা বলেন বাংলায় মুসলিমেরা বঞ্চিত, তাঁরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার জন্য বলেন। বাংলার সমস্ত অনগ্রসর অংশের মানুষ বঞ্চিত। আমার লড়াই তাঁদের সকলের জন্য।’’