বৃহস্পতিবার ময়নাগুড়ির মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। — নিজস্ব চিত্র।
মুখোমুখি লড়াই হবে ময়নাগুড়ির মাঠে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ২৯ মিনিট পর্যন্ত এমনই উত্তেজনা ছিল তৃণমূল এবং বিজেপি শিবিরে। কিন্তু তার মিনিটখানেকের মধ্যেই তৃণমূলের মঞ্চে গিয়ে বিতর্কে যোগদান থেকে পিছু হাঁটে বিজেপি। ১টা ৩০ মিনিটে বিজেপির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হতে মঞ্চে যাচ্ছেন না কেউ। ফলে সকাল থেকে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের লড়াই আন্তর্জালেই থেকে গেল। ময়দানে নামল না। কারণ, শেষবেলায় রণে ভঙ্গ দিল বিজেপি। প্রত্যাশিত ভাবেই তার পূর্ণ সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন অভিষেক। নাটকীয় ভাবে ময়নাগুড়ির মঞ্চে বিজেপির অনুপস্থিতিকে তুলে ধরেছেন তিনি। দেখিয়ে দিয়েছেন, তর্কের প্রস্তুতি নিয়ে জোড়া পোডিয়াম তৈরিই ছিল। কিন্তু বিজেপি এল না!
বস্তুত, বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ থেকে দিল্লিবাড়ির লড়াইয়েরই প্রচার শুরু করলেন অভিষেক। গত রবিবার যে তেজ নিয়ে ব্রিগেড ময়দানের বক্তৃতা শেষ করেছিলেন, বৃহস্পতিবার তা বজায় রেখেই বিজেপিকে আক্রমণ শুরু করেন। রবিবারের মতোই বিজেপিকে ‘বাংলা-বিরোধী’ বলে আক্রমণ করেন। আর তার পরেই সরাসরি চলে আসেন চ্যালেঞ্জ নিয়েও ময়নাগুড়ির সভায় বিজেপির অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে।
বৃহস্পতিবার সকালে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে অভিষেক লিখেছিলেন, ‘‘মিথ্যাচার করার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জনগণের টাকা নষ্ট করছে। আমি বিজেপি নেতৃত্বকে আমার সঙ্গে মুখোমুখি তর্কে বসার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। ২০২১ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পগুলিতে ১ পয়সাও বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র। আমি যে ভুল তা প্রমাণ করার জন্য বিজেপিকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।’’
কোনও নির্দিষ্ট নেতা নয়, বিজেপি দলের তরফে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নেওয়া হয়। রাজ্য বিজেপির এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বিজ্ঞাপন (যাতে রাজ্যকে বরাদ্দের বিবরণ রয়েছে) পোস্ট করে লেখা হয়, ‘‘আপনি আপনার সুবিধামতো স্থান ও সময় জানান। আমরা আমাদের যুব মোর্চার কোনও এক জন কর্মীকে পাঠিয়ে দেব বিতর্কের জন্য। আপাতত এটা (বিজ্ঞাপন) পড়ে নিন।’’ বিজেপির পোস্টে অভিষেকের নামোল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু সেই পোস্টটি ‘রিপোস্ট’ করে অভিষেক আবার লেখেন, ‘‘আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টের সময় ময়নাগুড়ি টাউন ক্লাবের মাঠে। দয়া করে রেগা ও আবাস যোজনার শ্বেতপত্র সঙ্গে নিয়ে আসবেন। দেখা হবে।’’
অভিষেক সময় দিয়ে পোস্ট করেন দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে। এর পরে এক ঘণ্টা ‘যুদ্ধবিরতি’ ছিল। কিন্তু দেখা যায়, এক ঘণ্টা পার হওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বিজেপি ‘রণক্ষেত্র’ ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়। সেটাও রাজ্য দলের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে পোস্ট করে। লেখা হয়, ‘‘আমাদের যুবমোর্চার নেতারা ভেবে দেখেছেন, আপনার মতো দুর্নীতিগ্রস্তের পাশে এক ফ্রেমে দাঁড়ানো ঠিক হবে না। আমাদের নেতারা নিজের চেষ্টায় বড় হওয়া। আপনার মতো পরিবারতন্ত্রের প্রতিনিধি নন। তাই তাঁদের আত্মসম্মান রয়েছে। পাশাপাশি, আমরাও তৃণমূলের কাছে থেকে দুর্নীতির কোনও শ্বেতপত্র চাই না।’’ এই পোস্টের সঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত কিছু সংবাদের ‘লিঙ্ক’ দেয় বিজেপি।
এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে আর এর জবাব দেননি অভিষেক। ময়নাগুড়ির সভাতেও উল্লেখ করেননি। বরং বিজেপির অনুপস্থিতিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করেছেন। বলেছেন, ‘‘বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলাম। দুটো পোডিয়াম রেখেছিলাম। তর্ক হবে বলে। বলেছিলাম শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন।’’ এর পরে মঞ্চের এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটে বার বার বলতে থাকেন, ‘‘কেউ কি এসেছেন?’’
বলা বাহুল্য, কেউই ছিলেন না।
এর পরে অভিষেক অন্যান্য প্রসঙ্গে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, বিজেপি বৃহস্পতিবার যে ‘অস্ত্র’ অভিষেকের হাতে তুলে দিয়েছে, তার পূর্ণ সদ্বব্যবহার করেছেন তিনি। বিজেপির রাজ্য নেতারা অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলতে চাইছেন না। তবে একান্ত আলোচনায় অনেকে বলছেন যে, প্রথম চ্যালেঞ্জ জানানো পোস্টটি দেওয়া খানিকটা অবিমৃশ্যকারিতাই হয়ে গিয়েছিল। এর পরে সেটি চাপা দিতে দুপুর দেড়টা নাগাদ পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পোস্টটি করার সময়ে মনে করা হয়েছিল, অভিষেক সময় দিয়ে পাল্টা পোস্ট করবেন না। তবে বিজেপি মনে করছে, বিষয়টি ময়নাগুড়িতেই থেমে থাকবে না। ‘চ্যালেঞ্জের মুখে বিজেপি গরহাজির’ বলে পরের সভাগুলি থেকেও অভিষেক রাজনৈতিক আক্রমণ করতে পারেন। তখন পদ্মশিবির কী করবে, আপাতত সে আলোচনাও চলছে।